ভারত বর্ষ স্বাধীন হবার ১০ বছরের মধ্যে আমার জন্ম। ৪৭-এর আগষ্ট থেকে ৫৬-এর ডিসেম্বরের মধ্যে দেশ তখন কেবল নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা শুরুই করেছিলো। প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনেক ছিলো, পন্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন, দেশে ইকনমিক পুঁজি তেমন নেই, শিল্প বেশীর ভাগই দেশজ। নেহেরুজীর নেতৃত্বে আমাদের সকলকার পথ চলার শুরু। পরাধীনতার গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসার যে তীব্র বাসনা আপামর জনসাধারনের মধ্যে তখনকার কংগ্রেস নেতারা জাগিয়ে তুলে ছিলেন স্বাধীনতার আগে, পরে স্বাধীন দেশের ভালো করার প্রবণতাটা কিন্তু তেমন করে মনে হয় ঢোকাতে পারেন নি। তার অবশ্য অনেক কারণ আছে। স্বাধীনতার আগে যেটা ছিলো সকলের কাজ, ৪৭ এর ১৫-ই আগষ্টের পর তা কেবল নেতাদের দায়িত্বের সীমারেখায় চলে এলো। বলা ভালো আনা হলো। সময় যত পথ এগিয়েছে, রাজনীতি আর তার আলাদা আলাদা পতাকার ভিড়ে জাতীয় পতাকা ক্রমশ হারিয়ে যেতে থেকেছে। কিছু পন্ডিত, রাজনীতিজ্ঞ উঁচু মাপের মানুষও দেশ আর দেশের মানুষকে আলাদা করে দেশ গড়বার ধারণা দিতে পারেন নি। আমরা সকলে ইংরেজের গোলাম এটা বোঝানোর জন্য বা বুঝে নেবার জন্য কোন মানুষেরই কষ্ট হয়নি, তাই প্রাক স্বাধীনতা কালে দেশ একসাথে চলতে পেরেছিলো, নেতারাও চালিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন। কিন্তু এবার ? আমার দেশে এখন সব কিছুই তো আমার, কিন্তু কি ভাবে সকলকে ভাগ করে দেওয়া যাবে বিশেষ করে যখন ভান্ডারে সামগ্রী অপর্যাপ্ত নয়! এ সবের সাথে প্রধান অন্তরায় ছিলো অশিক্ষা, কুশিক্ষা, ক্ষুধা, দৈন্যতা, আর রোগ। সরকারের কাছে প্রায়রিটি ঠিক করা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। যত দিন পার হয়েছে এই প্রায়রিটির লিষ্ট লম্বাই হয়েছে, ছোট হয়নি। সুবিশাল এই দেশে তখন কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী আর জয়সলমীর থেকে ইটানগর প্রচুর কাজ। প্রচুর গড়াপেটা। রেল লাইন পাতা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ, বন্যা বা খরার জন্য লড়াই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানানো থেকে ভালো শিক্ষক বহাল করা সব কাজ। এই পাহাড় প্রমাণ কাজ যে কেবল একা সরকারের দ্বারা সম্ভব নয় সেটা আন্দাজ না করতে পারা সবচেয়ে বড় সেট ব্যাক বলে আমি মনে করি। এই কাজের জন্য যে শিক্ষা আর দূরদৃষ্টির প্রয়োজন ছিলো সেটা দেশের আপামর জন গণের মধ্যে ছিলো না। তাই আমার মতে সব কিছু একসাথে শুরু না করে যদি আমরা শিক্ষার বিস্তার নিয়ে সর্ব প্রথমে কাজ শুরু করতে পারতাম তাহলে আজ আমাদের অবস্থা আর একটু ভালো হতো। আজও পুরো দেশ শিক্ষিত নয়। স্বাধীনতার ৬২ বছর পরেও আমরা সকলে সাক্ষর নই। এটা বড়ই আফসোসের কথা।