ভালবাসা কোন খেলা নয়, এটা কোন লোক দেখানো কোন অনুভূতিও নয়। আজকাল এমন অবস্থা হয়েছে, ভালবাসা এখন টিস্যুর মত মানুষ ব্যবহার করছে যেন এটা কোন অনুভূতি নয়, এটা একটা বস্তু। আধুনিকতার নামে চলছে জীবনের বিনাশ, চলছে প্রতারণা। আজকাল মানুষ কমপক্ষে ৩টা গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড না রাখাকে অপমান মনে করে। কারও ব্যক্তিগত স্বাদ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নাই। কিন্তু, তারা তাদের এই স্বাদ নেয়ার জন্য যে কত নিরাপরাদ ছেলে/মেয়ের জীবনে নিয়ে আসে মৃত্যুর স্বাদ, এটা নিয়ে আমার অনেক সমস্যা। হয়তো আপনি বলবেন, এটা স্বাভাবিক কিংবা এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কি দরকার? আমরা সবাই তো সবই জানি… ইত্যাদি। কিন্তু তারপরও আমরা হাতে হাত রেখে বসে থাকি! এই হচ্ছি আমরা যারা পূণ্যের কথা বলে বেড়াই।
আমার কথা হল, আপনি এমন কোন মানুষের সাথে প্রেমের অভিনয় বা যা ইচ্ছা করেন, যে এতে অভ্যস্ত আর আপনার মত সেও এটা উপভোগ করে। কিন্তু কখনও এমন কিছু করবেন না যাতে সে সত্যি সত্যি আপনাকে ভালবেসে ফেলে। আর কখনও কারও কষ্ট নিয়ে আসবেন না বা তাচ্ছিল্য করবেন না; আজ তার এই দূরাবস্থা, কাল আপনার হবে। আপনি হ্য়তো ভাববেন যে, আমি কেনো আপনাকে এসব করতে মানা করছি না। কারণ আমি জানি, আমরা কেউই ‘না’ কথাটা শুনতে চাই না। তাই বললাম, কোন ‘সহজ-সরল মানুষের মন’ নিয়ে কখনও খেলবেন না। আপনার সমগুনের সাথে যা ইচ্ছা করেন।
এটাও সত্যি যে, আজকাল সমাজ ভালবাসাকে খারাপ চোখে দেখে। কয়েকটি উদাহরণ দেখিয়ে আলাদা করে দেই দুটি মানুষের সত্য ভালবাসার হৃদয়কে। তছনছ করে দেয় দুটি জীবন। আর কিছু কিছু পিতা-মাতা আছে যারা, মেয়ের ইচ্ছাটা শোনারও প্রয়োজন বোধ করেন না। মানলাম, তারা তাদের মেয়ের ভালোর জন্যই হয়তো করছেন। কিন্তু কখনও এটা ভাবেন না যে, সেই মেয়ে খুশি মনে থাকলেও বা সংসার করলেও তার হৃদয়ে যে কত কষ্ট লুকিয়ে আছে। আমি বলছি না তারা ভুল, আমি বলছি তাদের পদ্ধতিটা ভুল।
চলুন, আপনাকে কয়েকটি মেয়ের কিছু মনের কথা বলি যাদেরকে দেখে কখনও বিশ্বাস হবে না তারা এই কথা বলেছে।
# সবার জীবনে সুখ মেলে না। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আমাকে এই দুনিয়া থেকে বিদায় হতে হবে।
# তখন আমার এমন কোন বন্ধু ছিল না যাকে বিশ্বাস করে আমি সাহায্য চাইব আর যে আমাকে নিঃশর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।
# সমাজ আমাকে যতই কষ্ট দিক, কিন্তু আমি এই সমাজেই বাস করি। এখানে আমার ইচ্ছার কোন দাম নাই।
# আমি কখনও আমার মন মত কিছু পাই নাই। সবসময় আমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
# আমার ভাগ্যে কখনও সত্য ভালবাসা জুটবে না। আর অন্যে যার কথা বলবে তাকেই আমাকে ভালবাসতে হবে।
আরও অনেক কিছু…
**আপনার যদি এই কথাগুলো শুনে একটুও খারাপ আর কষ্ট না লাগে, তাহলে আর আমার বলার কিছুই নাই।**
কিন্তু আপনি যদি নিজের কানে সেগুলো শুনতেন, আপনি না চাইলেও আপনার মন কেঁদে উঠত। আর অসংখ্য মনের কান্নার শব্দে কেঁপে উঠতো মহান আল্লাহর আরশ।
তাছাড়া এটা নতুন কিছু না; আমরা সবাই সবই জানি কিন্তু এটাকে আমরা স্বাভাবিক মনে করি। হাহ!
আপনি অন্যকে চাপ দিবেন কেনো? তারও তো একটা মন আছে, আছে কিছু স্বপ্ন।
আমরা প্রায়ই শুনি, অমুক জায়গায় অমুক মেয়ে/ছেলে আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্য কারও আত্মহত্যার কারণ জানা যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা জানা যায় না, থেকে যায় গোপন। আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারি সে খুবই সুখি ছিল। আত্মহত্যার কোন কারণ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আমার ফাইল বন্ধ করে চলে যাই অন্যদিকে। আবার অনেক সময় কারণ খুঁজে পেয়েই মনে করি আমাদের কাজ শেষ। হাহ!
আবার অনেকক্ষেত্রে যখন জানতে পারি এই আত্মহত্যা ভালাবাসা কারণ। তখন অনেকে তাচ্ছিল্য করে বলি, আজকাল ছেলে/মেয়েরা সামান্য ভালোবাসার জন্য আত্মহত্যা করে। কিন্তু আমরা কখনও তাদের হৃদয়টাকে বুঝতে চেষ্টা করি না আর ভালবাসার পাশাপাশি অন্য কি কারণ আছে তাও খুঁটিয়ে দেখার দরকার মনে করি না। তাদেরকে দোষারোপ করি, কিন্তু সমস্যার উৎসের শিকড় কাটার কোন প্রয়োজন মনে করি না।
আর যারা কিশোর, আমরা মনে করি ভালবাসা হল লাইফ ইন্জয়ের যাস্ট একটা মাধ্যম, আর কিছুই না। তাই, আমাদের চলাফেরার মাঝে যে দেখতে খুবই সুন্দর, তাকে আমরা মন দেই। ধরলাম, আপনার ভালবাসা সত্য। কিন্তু আপনি যত যাই বলেন, এটা আপনার মনের ভালবাসা না। এটাকে বলতে পারেন, বিপরীত লিঙ্গের শরীরের প্রতি ভালবাসা। আর এটা কখনই সত্য ভালবাসা হতে পারে না। কারন, আপনি যখন আরেকটু বড় হবেন তখন আরও সুন্দর ও ফর্সা মানুষের দেখা পাবেন।
ভালবাসা হয় দুই হৃদয়ের মাঝে। এখানে শরীর কোন বিষয় না। আর সেজন্য হয়তো, পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে যারা তাদের ভালবাসার শরীর (চেহারা) না দেখেই তার মনকে ভালবাসে, সে কালো হোক বা ফর্সা। আর বিয়ের আগে তার শরীরকে টাচ করার চিন্তাও মাথায় আনে না। আর এটাই হচ্ছে পবিত্র ও সত্য ভালবাসা। আপনি হ্য়তো বলবেন, ভালবাসার মাঝে আবার বিয়ে আসলো কোথা থেকে। কিন্তু এই বিয়েই হচ্ছে সত্য ভালবাসার প্রতীক। কিন্ত হায়, আজ এমন অবস্থা হয়েছে যে ভালবাসার জন্য একজনকে, বিছানার জন্য অন্যজনকে আর সামাজিকতা রক্ষার্থে বিয়ের জন্য আরেকজনকে বাছাই করি।
আর যারা কিশোরী, আমরা ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ভালবাসাকে ব্যবহার করি। সর্বপ্রথম আসি টাকার কথায়। ধরুন আপানর মনের মানুষ আপনাকে কিছু টাকা দিল বা মোবাইলে ভরে দিল। আপনি এটা আপনার অধিকার মনে করে গ্রহন করেন। কিন্তু কখনও কি ভাবেন যে, ‘সে তো এখনও স্কুলের শেষ সীমানা পাড় করেনি, বা সে কলেজে পড়লেও সেতো এখনও উপার্জন করেনা। সে নিজের জমানো টাকা আমাকে দিচ্ছে। তার উচিত এ টাকা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখা যাতে সে যখন উপার্জন করবে, তখন সে আমার চাহিদা পূরণ করতে পারে স্বাচ্ছন্দ্য মনে।’ কিন্তু আপনর মাথায় তা কখনও আসেনি। এটাকে আপনি পবিত্র ও সত্য ভালবাসা বলেন? হাহ!
তাছাড়া আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। এমনও হতে পারে আপনার মনের মানুষ ভবিষ্যতে খুব ধনী হতে পারলো না। তাই বলে কি আপনি তাকে ছেঁড়ে দিবেন? আপনার যদি এতই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকত, তাহলে আপনার অবশ্যই আগে তাকে বলা উচিত ছিলো আপনার এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা। আপনি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে চান, অনেক টাকার মালিক হতে চান, ইত্যাদি।
কারন, আমি মনে করি, ইচ্ছা বা স্বপ্ন যেমনই হোক, তা তো আপনার মনেরই চাহিদা। আপনি কেন আপনার আপন সত্ত্বাকে গোপন বা নিঃশেষ করবেন? এতে যেমন আপনার মনের মানুষ কষ্ট পাবে, তেমনি আপনিও এই কষ্টের নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি পাবেন না।
আমরা যারা বাঙালী, আমরা খুবই নিজেদের নিয়ে গর্ব করি। বাংলা ভাষার জন্য অনুষ্ঠান করি, প্রতিযোগিতা বা বাংলা শেখানোর আয়োজন করি। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভাল কাজ। তাই আমি এই কর্মকাণ্ডকে শুভেচ্ছা জানাই, কিন্তু ধিক্কার দেই কর্মকাণ্ড পালনের পদ্ধতিকে। কারন এটা সেরকমই, আমরা যা বলি, ‘অমুক সরকার ধনীকে আরও ধনী আর গরিবকে আরও গরিব করছে।’ আমি ১০ বছর বাংলা মিডিয়ামে পড়ে যখন এস.এস.সি ক্যান্ডিডেট, ঠিক তখনই আমার জীবনে বয়ে যায় নিষ্ঠুরতা আর কষ্টের মধুর বন্যা! আমি দেখলাম, দুইদিন আগে যেখানে আমি দৌঁড়াতাম, সেখানে আমি হাঁটা তো দূরে থাক, বাম পাঁয়ে ভর দেয়ার শক্তিও আমার চলে গেছে। আরও কিছু ঘটনা ঘটে।
যাইহোক, আমি তার পরের বছর প্রাইভেটে ও’লেভেল পড়া শুরু করি। প্রথম ৩ মাস স্কুল করে দেখতে পেলাম দেশে বাঙালীর দশা। তারা বাংলা পড়তেই পারে না। এটাকি বাংলার দেশে থেকে বাংলার অবমাননা নয়? এটাকে না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু যারা বাংলা পড়ান, তারা বাংলার কোন নিয়মই মানেন না, তাছাড়া মানবেন কিভাবে, তারা তো জানেনই না। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলা প্রশ্নের উত্তর দেখলাম যাতে স্যার ‘এ’ দিয়েছেন, কিন্তু বাংলার কোন প্রফেসর তা দেখে পুরোটা কেটে দিবে। আর এভাবেই যারা বাংলা জানি, তারা বাংলার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি যা খুবই আনন্দের কথা, কিন্তু যারা জানে না, তারা বাংলা থেকে আরও দুরে সড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নাই। আমরা বলি, আমরা তো চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি।
আজ আমরা বাংলা নিয়ে অনেক লেখা লেখি করি, কিন্তু আমাদেরই একটি অংশ যে তা ভুলে যাচ্ছে, সে দিকে আমাদের নজর নাই। আর আমরা কেউ কেউ ইংরেজীকে খারাপ বলে সন্তানদের দুরে সড়িয়ে রাখি, কিন্তু তা সমাধানের কোন পদক্ষেপ নেই না। এই হচ্ছি আমর বাঙালী। হায়!
আজ তারা সামন্য বাংলা জানলেও যদি এভাবে চলতে থাকে, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, বাংলার মাটির একটি সন্তানও বাংলা বুঝতে পারবে না। আর এসব হচ্ছে খুবই ধীরে। তখন এই মাটিতে ইংরেজী হবে সার্বজনীন ভাষা আর বাংলা হবে অপশোনাল ভাষা। হায়!
আপনি হয়তো এটাও বলবেন যে, আমি কেন এত বড় বড় কথা বলছি.. আমি কোন বড় বড় কথা বলছি না, শুধুমাত্র মনের কিছু কথা বলছি।
আমি জানি, এখন আমি কিছুই করতে পারব না আর আমার কথাও কারো ভাল লাগবে না। কিন্তু একদিন আমি অনেক বড় হব, সেদিন হবে আমার দিন। আর সেইসাথে যারা ভালবাসার নামে ছলনা করে মানুষের মন কান্নায় ভরে দেয়, তাদের জন্য আমি হব মৃত্যুদূত। আর আমি কোন মনগড়া কথা এখন বলছি না। যা সত্যি তাই বললাম
ভাল থাকবেন।
আমি যেন আমার লক্ষ্যে সফল হতে পারি, দোআ করবেন।
আল্লাহ হাফেজ।