হিজল- করচ- আড়াং বন, হাকালুকির মূলধন এ শোগানটির মর্মার্থ অনেক বেশি। প্রবীণদের মুখে মুখে গল্পে শুনা যায় হাকালকি হাওরের আদি পরিচয়। জানা যায় হাকালুকি হাওর এক সময় ভরপুর ছিল হিজল-করচের জঙ্গলে। এখানে বসবাস করতো বাঘ, ভলুক, হরিণ, বানর, শিয়াল, বনবিড়াল এমনকি হাতিরও দেখা মিলতো এ জঙ্গলে। কালের পরিক্রমায় সে জঙ্গলের অবস্থা আজ মৃতপ্রায়।
জানা যায়, যুদ্ধের সময় মুক্তি সেনারা এ জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থেকে শত্র“বাহিনীর ওপর হামলা করতো। তাই এ জঙ্গল পরিষ্কার করার জন্য শত্র“বাহিনী ওপর থেকে রাসায়নিক প্রয়োগ করতো। এতে জঙ্গলের ব্যাপক তি সাধিত হয়। এ ছাড়া ক্রম বর্ধমান জনসংখ্যার জ্বালানি, নির্মাণ সমগ্রী, বিলে ঝাটা/কাঠা দেয়া ইত্যাদির প্রয়োজন মেটানোর জন্য মানুষ নির্বিচারে এগুলো কেঁটে নিয়েছে। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জঙ্গল কেঁটে তা ধানী জমিতে রূপান্তর করেছে। জঙ্গলের মধ্যে হাজার হাজার গরু-মহিষের অবাদ বিচারনের কারনে গবাদি পশুর পায়ে পিষ্ট হয়ে নষ্ট হয়ে যায় কচি হিজলের চারা। এভাবে দিন দিন হাওরের জঙ্গল হারিয়ে গিয়েছে। জঙ্গল হারানোর সাথে সাথে এখানে বসবাসকারী সকল জীব-জন্তুগুলোও চলে গিয়েছে অন্যত্র। স্বাভাবিকভাবেই হাওর তার প্রতিবেশগত ভারসাম্য হারাতে বসে। এরূপ পরিস্থিতিতে বিষয়টি পরিবেশবাদীদের নজরে আসে। হাওরটির প্রতিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সরকার এটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এল্েয কাজ করে যাচ্ছে।
সরেজমিন হাওরে গিয়ে দেখা যায়, হাকালুকি যেন আবার তার প্রাণপ্রাচুর্য ফিরে পেতে যাচ্ছে। হিজল-করচ-আড়াংয়ের জঙ্গলে আবার ভরে যাচ্ছে হাকালুকির বুক। দীর্ঘ ৬ মাস পানির নিচে ডুবে থাকা হিজলের বন মাথা উঁচু করে জেগে উঠছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যান স¤প্রসারণ কর্মকর্তা জনান, হাওরে এখন প্রায় ১ হাজার হেক্টর হিজল-করচের বন রয়েছে। এ বনসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য রার জন্য হাওরে ৩০ জন পাহারাদার নিযুক্ত রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পের কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন কর্মীগণ স্থানীয় জনগণের মধ্যে এ সকল সম্পদ রার জন্য সচেতনতামূলক নানারকম কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। হাওরের জঙ্গলগুলো এখন প্রায় ১২-১৫ ফুট উঁচু হয়েছে। স্থানীয় জনগন যদি এগুলোকে নিজেদের সম্পদ মনে করে সংরণ করে তাহলে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই হাকালুকির হারানো ভারসাম্য আবার ফিরে পাবে ।