• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

বাংলা ব্লগ । Bangla Blog

এভারগ্রীন বাংলা ব্লগ

  • ই-বাংলা
  • লাইব্রেরি
  • হেলথ
  • ইবুক

পথে-ঘাটে (পর্ব – ৬) স্কুটার

December 16, 2009 by probasi

  ৬

স্কুটার

 

 সে দিন শনিবার। আলসেমিটা কোনও মতে কাটিয়ে সকালের চা, মুড়ি আর মুখরোচক চানাচুর দিয়ে প্রাতরাশ।

দিবাকর আর চিত্ত ঘুরছিল সাউদার্ন এভিনিউ–এ। চিত্ত এক প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার … দিবাকরের সাথে পরিচয় সেই ম্যাক্স–মূলার ভবনের জার্মান–ভাষা ক্লাস থেকে … সেদিনের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। কখনও সপ্তাহান্তে অথবা কোনও ছুটির দিনে সময় পেলে ও দিবাকরকে স্কুটার চালানো শেখায়। সেদিন টালিগঞ্জ লেকের পাশ দিয়ে স্কুটার চালাচ্ছিল দিবাকর। এই রাস্তায় এমনিতেই খুব একটা ভীড় থাকে না, আর এ সময়টায় প্রায় ফাঁকাই বলা চলে। ড্রাইভিং প্র্যাক্টিস করবার পক্ষে উপযুক্ত রাস্তা বটে।

আরে… দীপদা না! … স্কুটার নিয়ে হুস করে বেরিয়ে গেল। তাইতো দীপদা–ই হবে, জয়া কলেজের এক বান্ধবীর সাথে শনিবার দুপুরের নিরিবিলি সাউদার্ন এভনিউ–এ যেতে যেতে হটাত নজরে পরল দিবাকর–কে। জয়ার ডাক ওর কানে আর পৌঁছোয় নি। ভালই হয়েছে, ওঃ ‘দীপদা কিং অব দ্য রোড্‘… ছোট্ট মেয়ের মত নেচে উঠল জয়ার মন দুষ্টুমিতে। আসুক না আজ দীপদা… বেশ ভাল করে রাগানো যাবে।

বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই জয়া হট্টগোল শুরু করে দিল…

– মা, মা শুনছ … কোথায় গেলে তুমি!…

চেঁচামেচির ঠেলায় নাসিম মাসী আর আমীর দুজনেই কাজ–কর্ম সব স্থগিত রেখে এসে পড়ল…

– আরে, ব্যাপারটা কি? এত সব চেঁচামেচি… তা হ‘লটা কী?

– দীপদাকে দেখলাম আজ – রাস্তায়, ডাকলাম কিন্তু একবার তাকিয়েও দেখল না।

– দূর, কাকে না কাকে দেখেছিস … অমনি দীপদা হয়ে গেল! দিবাকর তোকে চিনবে না, এটা হ‘তেই পারে না। … বলল আমীর।

নাসিম মাসী একটু হেসে ভর্ৎসনা স্বরে বললেন

– পাগল মেয়ে, দীপ ও রকম ছেলে হতেই পারে না… রাস্তায় কাকে দেখেছিস! নতুন চশমার দরকার বোধ হয়!

– হ্যাঁ, আমার চোখ খারাপ, মাথাটাও হয়ত খারাপ… আরে, আমি স্বচক্ষে দেখলাম দীপদা সাদার্ন এভনিউ–এ স্কুটার চালিয়ে যাচ্ছে। পিছনের সীট–এও ছিল একজন, দীপদার কোনও বন্ধু–টন্ধু হবে। দেখতে পেয়ে ডাকলাম, কিন্তু ফিরেও দেখল না।

– ওঃ, জয়া… বড় বুদ্ধিমতী বোন আমার। তোর ডাক তো দীপ শুনতেই পায় নি! তা, ফিরে আর দেখবে কাকে?

– হ্যাঁ, ঠিক তাই হবে … আর সে যাই–ই হ‘ক, দীপদাকে একটু রাগাতে হবে।

নাসিম মাসী ধূপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন …

– জয়া, ঠিক দেখেছিস কি দীপকে স্কুটার চালাতে? …

– আরে হ্যাঁ মা, হ্যাঁ, দীপদাকে চিনতে আমার ভুল হবে নাকি … তোমাদের হয়েছে–টা কী?

– না, কিচ্ছু না।

মা–র কণ্ঠস্বর হটাত কেন যেন অপরিচিত, বিচলিত লাগল জয়া আর আমীর এর কাছে। একটু থমকে থেকে জয়া এগুলো রান্না ঘরের দিকে।

***

ড্রাইভিং প্র্যাক্টিস তারপর ‘মৌচাক‘-এ মিষ্টি খাওয়া আর কিছুটা সময় আড্ডা। কেটে গেল গোটা দুপুর – টের পাওয়ার আগেই। যাদবপুর বাড়ির পথেই পরে, চিত্ত দিবাকরকে বাস–স্ট্যান্ড অবধি পৌঁছে দিল।

 

দরজাটা জয়াই খুলল।

– এস দীপদা, বস এক সেকেন্ড – চা আনছি।

দীপের বহু দিনের চেনা ঘর, নিজেদের বাড়ির মতই। কোনও ফর্মালিটির বালাই নেই … সহজ, আন্তরিক। শনিবার অপরাহ্ণ, রোদটাও কমেছে আর সেই সাথে গরমটাও। ছেলে মেয়েরা বেরুচ্ছে ধীরে ধীরে। খোলা জানালায় ভেসে আসছে মৃদু কোলাহল, আর তারই সাথে এদিক ওদিক থেকে পড়শীদের রেডিওর নানা গানের মিশ্রণ। আমীর নিমগ্ন ছিল একটা বই নিয়ে। বইটা নামিয়ে রেখে বসল দিবাকরের পাশে।

– তারপর, কেমন আছ দীপ?

– আরে, বেশ ভাল। আজ একটু ড্রাইভিং প্র্যাক্টিস করলাম, মোটামুটি ভালই হচ্ছে। মাসীমা কোথায়?

– মা রান্না ঘরে, সম্ভবতঃ পেঁয়াজী টেয়াজী কিছু করছে জয়ার সাথে।

 

গরম চা আর তার সাথে নাসিম মাসীর তাজা পেঁয়াজী নিয়ে জয়া আর মাসী দুজনেই হাজির। কাপগুলোতে চা ঢেলে সবাইকে দিতে দিতে জয়া বলল…

– আচ্ছা, দীপদা তোমাকে আজ দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি আজ দুপুরে স্কুটার চালাচ্ছিলে … সাদার্ন এভিনিউ–এ?

– হ্যাঁ, তাই তো, কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে?

– আরে, আমি কলেজের এক বান্ধবীর সাথে ওই রাস্তায় ঘুরেছিলাম… তোমাকে ডাকলাম, কিন্তু তুমি দেখলেই না।

– আচ্ছা পাগল তো তুমি… শুনতে না পেলে, সাড়া দিই কী ভাবে, আর দেখবই বা কী করে? দেখছেন মাসীমা কেমন সব পাগলের মত কথা বলছে!

… হাসতে হাসতে বলল দিবাকর।

 

 নাসিম মাসী কোনোও সাড়াশব্দ নেই, কথার উত্তর দেওয়ার কোনও প্রচেষ্টা না করে, অকারণ চা–কাপটা নাড়াচাড়া করছেন, কেমন যেন উদাস, অনুপস্থিত। কোনও কারণে এক বিষাদ ভরা ছায়া আবৃত করছে তাঁর মুখমণ্ডল … এটা কারও নজর এড়ালো না। একটু অস্বস্তিকর পরিস্থিতি– অনুভব করল সবাই। ব্যাপারটা কী বুঝতে না পেরে চুপ রইল দিবাকর। জয়া আর আমীর – দুজন প্রায় এক সাথে জিজ্ঞাসা করল,

– কী হয়েছে, মা?

– আরে না, কিছু না তো!

– না, তা হবে না … এভাবে কথাটা এড়ানো চলবে না। বল না মা, কী ব্যাপার, আজ দুপুর থেকেই তুমি কোন্‌ও কারণে মুষড়ে আছ। তুমি না বললে আমাদেরও শান্তি নেই।

 

 একটু নীরব থেকে নাসিম মাসী ম্লান হেসে বললেন…

– আজ দুপুর থেকেই মনটা খারাপ হয়ে উঠেছে। জয়া যখন হৈচৈ করে খবর দিল দীপের স্কুটার চালানোর কথা, তখন থেকে তোলপাড় হচ্ছে হৃদয়।

 মাসীর কথা শুনে দিবাকর ত‘ হত–বাক, ব্যাপারটা ওর বোধগম্য হ‘ল না মোটেই। শুধু দিবাকর নয় সবাই অপ্রস্তুত। ক্ষণিকের সে নিস্তব্ধতা, জড়তা কাটিয়ে মৃদুস্বরে দিবাকর চাইল মাসীর দিকে, বলল–

– হ্যাঁ মাসীমা, আজ স্কুটার ড্রাইভিং প্র্যাক্টিস করছিলাম,- তা ওতে দোষটা কী হ‘য়েছে! …

– না, না দীপ… তোমার দোষ কোথায়! তুমি ড্রাইভিং শিখছ এক তিল–ও দোষ নেই এতে। তবে তোমার স্কুটার চালানোর কথা শুনতেই খচ্‌ করে উঠল মনটা।

 কোন কিছু বুঝতে না পেরে, ফ্যাল্–ফ্যাল্‌ করে চাইল সবাই নাসিম মাসীর দিকে।

– এই স্কুটারের বলিদান হয়েছে আমার সব চাইতে প্রিয় মানুষের … আমার সকল প্রাণের ভালবাসা সুব্রত–কে ছিনিয়ে নিয়েছে ঐ স্কুটার। তাই স্কুটার কথাটা শুনলে উথাল–পাথাল হয়ে ওঠে আমার মন। দীপ, এই কটা দিন হ‘ল মাত্র, কোথা থেকে তুমি এলে এখানে, ঠাঁই করে নিলে আমাদের মাঝে … এখন, এ পরিবারে আমাদের–ই একজন। এ কারণে মনটা কোনও এক আশঙ্কায় খারাপ হয়ে গেল।

 মাসীর কথা গুলি স্পর্শ করল সবাইকে। আমীর বলল …

– বাবার এ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল সেটা আমরা জানি, কিন্তু সব কিছু বিস্তৃত ভাবে জানা নেই আমাদের। আর নূতন ক‘রে তোমার আঘাত লাগবে এই ভয়ে, এ প্রসঙ্গে তোমাকে জিজ্ঞাসা করি নি আমরা – কোনও দিন।

– শুধু ওই স্কুটার এ্যাকসিডেন্ট নয় … আরও অনেক কথা, আমাদের কথা, সুব্রত আর আমার কথা, যা অনেকদিন, অনেক বার বলি বলি করেও আর বলা হয় নি।

 নাসিম মাসীর বিচলিত কণ্ঠ –

– যা কিছু এতদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি, আজ তাহলে বলছি তোমাদের …

 

***

… ক্রমশ

পূর্ব প্রকাশিত পর্ব [১] [২] [৩] [৪] [৫]    পরবর্তী পর্ব   [৭]

Category: ব্লগ

About probasi

Previous Post:এর পরেও কি তারেক রহমানকে আমরা চাই????
Next Post:স্বপ্ন পূরণের পথে একদিন…

eBangla.org