অনেকটা রূপকথার গল্পের মতন, এক ছিলো রাজা-রানী ও টোনাটুনি। তারপরেরটা সবার জানা, তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। ছোট ছেলেটাও সেদিন পাঁচিল টপকে, সকলের চোখ বাঁচিয়ে সাইকেলটায় দুপা জোরে চালিয়ে রূপকথার কোন গল্পের পাতায় ঢুকে গিয়েছিল। প্রথমেই পড়ল এক ধানক্ষেত, ছেলেটা শহরে বড় হয়েছে, ধানক্ষেত দেখেনি কোনদিন। কুনো ব্যাঙ আর গেছো ব্যাঙ কোথায় থাকে তাও ছেলেটা জানেনা। ব্যাকপ্যাকে সাথে করে বাইনোকুলার আর ল্যাপটপ নিয়ে এসেছে। কিছু না জানলে ঝট করে সার্চ দেবে। কিন্তু ধানক্ষেতে কি নেটওয়ার্ক থাকে? তবে রূপকথায় ছেলেটার নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা হয়নি। কুনো ব্যাঙ কোথায় থাকে সার্চ দিতে যাবে তখনি কে যেন ওর পায়ে চিমটি দিল।
“আউ!” বলে ছেলেটা মাথা ঘুরিয়ে দেখে চুপচাপ ভদ্রলোক মতন একটা প্রাণী কাস্তে হাতে দাঁড়িয়ে আছে। “তুমি কে?” ছেলেটার প্রশ্ন।
“আমি কে? কেন দেখে কি মনেহয়? দেখতে তো মানুষের মতই, কিন্তু বুদ্ধিতে পিছিয়ে আছো দেখছি। তা এই ভরদুপুরে আমার জমিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি তামাশা দেখছ?” ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো।
ছেলেটা হতবাক! ধমক খেয়ে আমতা আমতা শুরু হল, বলল “দেখো, আমি শহর থেকে এসেছি, জমি ধানক্ষেত কখনো দেখিনি তো, তাই একটু মনভরে দেখে নিচ্ছিলাম”। প্রাণীটা তখন তোড়জোড় লাগিয়ে বলল “কাজের বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে। ধানকাটার সময়, ধানকাটা শেষ হলে নবান্ন হবে, টোনাটুনির বাসায় ভোজ হবে। তুমি বরং আমার কার্ডটা রেখে দাও। পরে সময় করে তোমার সাথে আলাপ করব।” এ বলেই জামার পকেট থেকে একটা ছোট্ট চিরকুটের মতন কাগজ ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিল। তাড়া খেয়ে সাইকেলে পা চালিয়ে আরো বেশকিছু দুরে এসে থামল। হাতের চিরকুট টা মেলে ধরতেই ছেলেটার বিস্ময় আকাশ ছাড়িয়ে গেল। সেখানে লেখা আছে:
নাম: ইন্দুর রন্দুই ই (ইরই)
বয়স: ০.১৩৫
পেশা: কৃষক
বাসস্থান: কারো জায়গা না
কর্মস্থল: ইন্দুরাংশ জমি ভগ্নাংশ উত্তর দক্ষিণ এক-পঞ্চমাংশ
সেই প্রাণীটা তাহলে ইঁদুর। চিরকুটে হাস্যরত ইরইর ছবির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটা, অমনি মাথায় কি যেন পড়ল। উপরে তাকিয়ে দেখে একটা ছোট্ট পাখির ছা গুলতি হাতে মিটমিটিয়ে হাসছে আর ওর দিকে তাক করে খড়কুটো ছুঁড়ে মারছে।
ছেলেটা: “এই থামো, আর একবার করেছো তো তোমার বাবা-মার কাছে নালিশ করব”।
পাখির ছা খুব মজা পেয়ে গেল। ছোট্ট ডানা ঝাপটে, ছেলেটার কাছে এসে, গলার স্বর নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলল “আমি এখন উড়তে শিখেছি। আজ রাতেই উড়ে উড়ে মানুষের দেশে চলে যাব। এখানে আর থাকবোনা। রোজ রোজ মা আমাকে দুইয়ের নামতা পড়তে বলে। আমার আর ভালো লাগেনা।” এই বলে পাখিটা ছড়া কাটে “চলে যাব চলে যাব চলে যাব, তালপিঠে মিছরি তালবন মহুয়া, ছেড়েছুড়ে চলে যাব চলে যাব চলে যাব”।
ছেলেটা অবাক হয়ে ভাবে, পাখিটা মানুষের দেশে যেতে চাইছে কেন? মাত্রতো তো দুইয়ের নামতা, আর ওখানকার ম্যাথ কত হার্ড! জ্যামিতি, অ্যালজেব্রা আরো নানান ফ্যাকরা। সেই সময় পাখির বাসা থেকে মা পাখি ডাক দিল ” টুনটুনিয়া আনিটুনটু, কোথায় তুমি, তোমার জন্য পিঠে করেছি, খেতে এস মা”।
ছোট্ট পাখিটা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল “চলে যাবনা, যাবনা, তালপিঠে, মিছরি তালবন মহুয়া, ছেড়ে যাবনা যাবনা যাবনা। দুই এক্কে দুই, দুই দুগুনে সাত, তিন দুগুনে এক….” এই বলে পাখিটা বাসায় উড়ে গেল।
ছেলেটা একা একা দাঁড়িয়ে ভাবছে, এখন কোথায় যাবে। আর তক্ষণই কারেন্ট চলে গেল। “রূপকথার সাইকেল” এর শেষটা না দেখেই তাই উঠে আসলো মাত্রা।