ছায়াবৃতা
পরাধীনতার অবসান হয়েছে… বিদেশী প্রভুত্ব খতম হয়েছে অনেকগুলি দশক , কিন্তু খতম হয়নি আভিজাত্যের মিথ্যা অভিমান। আজও রয়েছে জাত–ভেদ, আজ পর্য্যন্তও নারী–স্বাধীনতা স্বীকার করতে নারাজ আমাদের দেশের সব সমাজ। মজ্জ্বায় মজ্জ্বায় জড়িত কু–শিক্ষা, কু–প্রথা। হায়রে তার পরিনাম মেয়েরাও প্রায় বিনাপ্রতিবাদে স্বীকার করে নিচ্ছে আজও এই ঘুনধরা সমাজের অন্যায় অবিচারের কু–প্রথা। দুর্ভাগ্যের কথা, শুধু মাত্র স্বীকার করা নয়, এ সমাজের মেয়েদেরই এক বড় সংখ্যা প্রত্যক্ষ আপ্রত্যক্ষ ভাবে অংসীদারী নারী–স্বাধীনতা হরন এবং নারী–পীড়ন–এর।
স্বামী, শ্বশুরের কর্তৃত্ব তো রয়েছেই আর তারই জুটি শ্বাশুরী–ননদের যাতনা অর্থাত্ গোদের ওপর বিষফোঁট আরকি। আজও মাছের বড় টুকরোটা পায়না বাড়ীর মেয়েটা, পরে ছেলের থালিতে… আর সেটা আসে মা–এর হাত থেকে। … স্নেহময়ী মা। হায়রে ছায়াবৃতা নারী, মাতৃস্নেহেও পক্ষপাতিত্ত্বতা, বৈষম্যমূলতা … যুগ–যুগের কু–শিক্ষা আর বিকৃত সংস্কৃতির ফলবিশেষ।
নারী–পুরুষের আইনগত সম–অধিকার অবশ্যই বর্তমান, কিন্তু ঘুনধরা সমাজের অন্ধতাপূর্ণ আদিম দৃষ্টিভঙ্গী আদালতের কানুন দ্বারা পরিবর্তন করা বাস্তবিকপক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মধ্যযুগ আজও এই একবিংশ–শতাব্দীতে আমাদের দেশে প্রতি নিয়ত উপস্থিত… এ কথা অবিবাদিয়।
যতদিন সামাজিক বিপ্লব দেশের প্রতিটি কোনে, ঘরে–ঘরে সমাজের প্রতিটি স্তরে জাতি–ধ র্ম, পেশা এবং স্ত্রী–পুরুষ নির্বিশেষে নূতন, উন্মুক্ত, উদার চিন্তাধারা পৌঁছে না দিয়েছে তথাবধি সামাজিক স্বাধীনতা স্বপ্নাতীত।
পৃথিবীর অনেক দেশে পুরুষপ্রাধান্য অবলুপ্ত হয়ে নারী–পুরুষের সামাজিক সমাধিকার স্বাভাবিকতার স্তর স্পর্শিত করেছে … আমাদের দেশের সব মেয়েরা কি এই সামাজিক সমাধিকার, সামাজিক স্বাধীনতার অযোগ্য?
লোকদেখানো প্রগতিশীলতার অভিনয় করাটা এক ফ্যাশনের সামিল, ওষ্ঠে প্রগতির বুলি … কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এই লজ্জ্বার কথা অস্বীকার করবার উপায় নেই।
… এ সব কিছু শুধুমাত্র সরকারী রাজনীতিমূলক প্রশ্ন নয়, এটা মূলতঃ সমাজিক প্রশ্ন। কেবলমাত্র সরকারকে দোষারোপ করে, সমাজের অপকর্মে আপন ভূমিকাকে অস্বীকার করে সামাজিক অবিচার, অনাচার–এর দায়ীত্ব থেকে মুক্ত হবার প্রচেষ্টাটা খুবই সহজ… সামাজিক উন্নতির কন্ঠরোধ এখানেই।