কয়েকদিন ধরে পুরোপুরি ঘরকুনো। বাইরে বের হচ্ছিলাম না। ঘরে ক্রিকেট খেলা দেখা আর গান শোনা নিয়ে চলে যাচ্ছিল সময়। মাঝে মাঝে হুমায়ূন আহমেদ, যতক্ষণ না চোখে ব্যাথা শুরু হয়। তবে কম্পিউটার বা আইপড-এ গান শুনার তুলনা হয় না। যখন যেখানে খুশি চলে যাওয়া যায়। যেমন করে খুব সহজে ‘সব আলো নিভিয়ে দিয়ে চলে গেলে তুমি…’। আইয়ুব বাচ্চু। একটা মজার ব্যাপার- ওল্ড ইজ গোল্ড- কথাটা সবসময়ই খুব বেশী সত্য। নতুন গান একবার শুনি। পুরাতনগুলো বার বার। ‘চলো বদলে যাই’ আইয়ুব বাচ্চুর ‘লেটেস্ট’ কিসের সাথে তুলনা চলে! ফেরারী এ মনটা আমার, সেই তারা ভরা রাতে, কোন অভিযোগ নেই যে আমার/কোন অভিমান নেই এখন…। টুটুলের ‘আমার রূপকথা নেই/আমার শুকসারি নেই/ ঝাড়বাতি জ্বালানো/সাজানো সাজঘর নেই…’ বার বার ফিরে ফিরে আসে। পার্থর ‘…আমি ভুলে যাই তুমি আমার নও’ লাইনটাও ভোলা হয় না। মাইলসের গানগুলো তো অংকের খাতা ভরা থাকতো। আবার অনেকের প্রিয় আসিফের দু’একটা বাদে বাকি সব একঘেয়েমি লাগে। ‘এখনো মাঝে মাঝে/মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরে/শুনি তোমার পায়ের আওয়াজ/যেন তুমি এসেছো ফিরে/ তুমি চলে গেছ অনেক দূরে/এই মনের আঙিনা ছেড়ে…’ অসাধারণ। রাতের বেলা হাজার বার শোনা যায়। এরকম তপন চৌধুরী’র ‘আকাশের সব তারা ঝরে যাবে/আমার চোখের তারা ঝরবে না গো/ তোমাকে দেখার সাধ মরবেনা…’। আবার পথিক নবী যখন ‘আমার শুধু আমি আছি বোঝে নাতো কেউ’ কিংবা ‘বুকের ভিতর খাঁ খাঁ করে…’ বলে টান দেন তখন বুকের ভিতরটা কার না হু হু করে ওঠে!
হাসানের গান অনেকদিন শোনা হয় না। তবুও ‘প্লে লিস্ট’-এ ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’ পড়ে আছে। জেমস্ হিন্দী গাওয়া শুরু করলে কিছুটা অভিমান নিয়েই এর গানই শোনা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। জানি অবশ্যই কিছু একটা হবে, কিন্তু হিন্দি তো বুঝিনা। তো সে ভালো গান করবে আর আমি বুঝবো না- তাহলে কেমন করে হয়! দেখলাম কম্পিউটারে ‘…আমি কোন ফুলে দেব পূজা তোমার…’ আর ‘…জলের ঢেউ শ্যাওলা পাতা কেমন কইরা রে/ বন্ধু যখন চলে গেল খবর দিলি নে’ গান দুটি পর পর বাজছিল।
আর ফোক গান বা এর সুর তো মনের মাঝে সবসময়ই বাজে। মুজিব পরদেশী। ‘আমি কেমন করে পত্র লিখি রে বন্ধু/গ্রাম পোষ্ট অফিস নাই জানা…’, বিজয় সরকারের ‘তুমি জাননারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা’। মনে আছে- এক সময় সারা ঢাকা তন্যতন্য করে এ গানটি খুঁজছিলাম। নিউমার্কেটের উত্তরদিকের দোতলায় দোকানদার বের করে দিয়েছিলেন ব্যান্ড চাইম-এর বিকৃত সুরে গাওয়া গানটি। শুনে বমি বমি অবস্থা। আসল ফোক সুরে গাওয়া গানটি আর পাচ্ছিলাম না। শেষে পুরানা পল্টন আজাদ প্রোডাক্ট-এর সামনে ফুটপাতে পেয়েছিলাম এক বাউলের কন্ঠে। কিন্তু রেকোর্ডিং-এর মান ভালো না থাকায় মিউজিক ছাড়া গানের কথা কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। পরে কেমন করে যেন মুজিব পরদেশীর ‘বিজয় বিচ্ছেদ’ ক্যাসেটটি পেয়ে যাই। দিন-রাত বাজাতাম। সাথে ‘পোষা পাখী উড়ে যাবে সজনী একদিন ভাবি নাই মনে…’।
এমন করেই একদিন শুনতে পেলাম- ‘কাঙাল হইলে ভবে কেউ জিগায় না…’ – আজম খানের কন্ঠে। ভালো মন্দ বুঝি না। কারণ আর কারো কন্ঠে শুনতে পাই নাই। তবে খুঁজছি।
আর যে গানটি কখনোই ক্যাসেটে শুনি নাই- ‘আসমান ভাইঙ্গা জোস্না পড়ে/আমার ঘরে জোস্না কই/ আমার ঘরে এক হাঁটু জল/ পানিতে থইথই…’। গানটি শুনতাম গ্রামের আসরে। জোসনা রাতে গ্রামের অনেকের উঠানে এ ধরনের আসর বসে। সেরকম পরিবেশে এরকম গান শোনার অনুভুতিটাই আলাদা। এরকম আসর কিছু বাংলা নাটকে দেখা যায়। তেমন একটা নাটকে শুনেছিলাম ‘চান্দের আলো আমার রূপালী চাঁদ রে, তুই কি বন্ধুর শহরে উঠিস না…’। নাটকের নামটা ভুলে গেছি। মৌসুমী, বিপাশা, শিমুল, জাহিদ হোসেন শোভন- এরা ছিলেন।
এতবড় লেখা কোনো ব্লগে আজ অবধি লেখা হয়নি। এখন সমস্যা হচ্ছে- লেখা শেষ হচ্ছে না। আরো অনেক অনেক লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু…নাহ্, গান বাজছে ‘পরো পরো চৈতালী-সাঁজে কুস্মী সাড়ি’ নজরুল গীতি, অনুপ ঘোষাল…গানটা আগে শুনি…