কাল ছিপ নিয়ে নদীতে গিয়েছিলাম মাছ ধরতে। সেখানে এক মজার মানুষের সাথে পরিচয়।
নদীর পাড়ে গিয়ে দেখি সেখানে আরেক ভদ্রলোক ছিপ ফেলে বসে আছেন। স্বাস্থ রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে তার মেজাজটাও চড়ছে। বুঝলাম অনেকক্ষণ হয় এসেছেন কিন্তু কোন ফল হয় নি। আমি তার পাশেই ঘাঁটি ফেললাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার বড়ছির সাথে বেমানান এত ছোট একটা মাছ উঠলো যে ছেড়ে দিতে হল। সাথে আমার মেজাজটাও কিছুটা খারাপ হতে শুরু করল। দেখেছি যে শুরুতেই যদি মাছটি ছেড়ে দিতে হয় তো সেদিন আর কিছুই হয় না। ভদ্রলোক জায়গা বদল করতে বললেন। ভাবলাম দেখি অন্যদিকে গিয়ে কি হয়। দুজনেই গেলাম। সেখানে মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে ভদ্রলোকের সাথে অনেক কথা।
মাছের সাইকোলজির সাথে সাথে জীবনেরও অনেক কথা। প্রায় ১৮/২০ বছর আমেরিকায় থাকেন। ছেলে-মেয়েরা সবাই কলেজে পড়ছে। একটা গ্যাস স্টেশনের ব্যবসার শেয়রা আছে। সেখানে থেকে যা পান তাই দিয়ে সংসারের অন্য সবার খরচ চলে। নিজে সপ্তাহে ২/৩দিন কাজ করেন। তা দিয়ে নিজের খরচ চালান। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ান। আগে ড্রিঙ্ক/স্মোকিং-এর নেশা ছিল। ডাক্তারের নিষেধে সব ছেড়ে দিয়েছেন। কোন রোগ-বালাই নেই। এখন শুধু এই মাছ ধরার নেশাটাই আছে। চলনে-বলনে অত্যন্ত সাদাসিধে।
সবচেয়ে ভালো লাগল তার সাধারণ জীবন দর্শন। জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা থাকলে আর টাকা-পয়সার ধান্দা না থাকাই ভালো। এতে পুরো জীবনটাই নষ্ট হয় টাকাপয়সার পিছনে। আমেরিকার অনেক পরিচিত বাঙ্গালীদের কথা বললেন। যথেষ্ট থাকার পরও শুধু টাকা আর টাকা করেই এখন জীবনটা পঙ্গু। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আরো কত কি।
শুনতে পাই আমেরিকায় গেলেই সবার ঈশ্বর হয় ডলার। ডলারের পূজাই বড় পূজা। সেখানে যে এরকম মানুষও থাকতে পারে- সেটা ছিল ধারনার বাইরে।