খবরটি ১লা জুন, ২০০৭-এর দৈনিক প্রথম আলোর। এ ঘটনা আমেরিকায় হলে এ নিয়ে নির্ঘাত হলিউডে এতক্ষণ একটা ‘সাংঘাতিক মুভি’ তৈরী শুরু হয়ে যেত। আর্কাইভে রেখে দিলাম।
বসুন্ধরার মালিকের ছেলেকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন বাবর
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে দেওয়া ঘুষের ২০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে নয়টি চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে| বিএনপির সাবেক সাংসদ, শিল্পপতি কাজী সালিমুল হকের (কাজী কামাল) কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করা হয়েছে|
কাজী সালিমুল হক বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান| তাঁর দেওয়া চেক ও পে-অর্ডারের মধ্যে পাঁচটি প্রাইম ব্যাংকের| দুটি করে চেক ও পে-অর্ডার দেওয়া হয়েছে সাউথইস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের|
সাবেক জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে লুত্ফুজ্জামান বাবর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের শাহ আলম কাছ থেকে এই ঘুষ নিয়েছিলেন| শাহ আলমের ছেলে সাফিয়াত সোবহান সানবিকে একটি খুনের মামলা থেকে রেহাই দিতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে এই ২০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল|
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া এবং তা ফেরত দেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়| এ বিষয়ে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে তিনটি ব্যাংকের নয়টি চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ ফেরত দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে|
আদায় করা এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয় গত বুধবার| গতকাল বৃহস্পতিবার পে-অর্ডার ও চেক÷লো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের “ক্লিয়ারিং হাউস”-এ দেওয়া হয়|
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের আরেক পরিচালক আবু সুফিয়ান ও মহাব্যবস্থাপক লিয়াকত আলী তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে সমঝোতা করেন| তাঁরা পাঁচ কোটি টাকা নগদ দেন| আর বাবরের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি ১৫ কোটি টাকা কাজী সালিমুল হকের কাছে দেওয়া হয় পে-অর্ডারের মাধ্যমে| তদন্তে প্রমাণ পাওয়ার পর যৌথ বাহিনীর কাছে জনাব বাবর ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন| লুৎফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে|
২০০৬ সালের জুলাই মাসে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বিরকে হত্যা করা হয়| ÷লশানের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়| এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে সাফিয়াত সোবহান সানবিকে সন্দেহ করা হয়| এ নিয়ে সে সময় লেখালেখি হলে সানবি দেশ ছেড়ে চলে যান| তাঁকে দেশ ত্যাগে সহায়তা করা হয়েছিল বলে জানা গেছে| এমনকি এই মামলা এখনো নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় রয়েছে| বর্তমানে সানবি লন্ডনে| বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানও এখন সপরিবারে লন্ডনে| সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে সরকারের দেওয়া প্রথম ৫০ জনের তালিকায় তাঁর নাম থাকার পর থেকেই তিনি পলাতক| এই তালিকা ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়|
জানা গেছে, আহমেদ আকবর সোবহান ছেলেকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে লুত্ফুজ্জামান বাবরকে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার চুক্তি করেছিলেন| ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের একজন পরিচালকের কাছ থেকে যৌথ বাহিনী এ তথ্য জানতে পারে| প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কিছু অর্থ তিনি নিজেই বাবরের বাসায় দিতে গিয়েছিলেন| কিন্তু একবার যখন নগদ এক কোটি টাকা নিয়ে তিনি বাবরের বাসায় যান, তখন এই অর্থ জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হককে পৌঁছে দিতে বলেন| এই অর্থ কাজী সালিমুল হক ব্যাংকে জমা রাখেন|
যৌথ বাহিনীর কাছে পরে কাজী সালিমুল হক এই অর্থ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন| তিনিই এই অর্থ যৌথ বাহিনীর কাছে ফেরত দিলে তা গতকাল সরকারি কোষাগারে জমা হয়| এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় কাজী সালিমুল হককে পাওয়া যায়নি|
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১লা জুন, ২০০৭।