• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

বাংলা ব্লগ । Bangla Blog

এভারগ্রীন বাংলা ব্লগ

  • ই-বাংলা
  • লাইব্রেরি
  • হেলথ
  • ইবুক

আজ সত্যজিতের জন্মদিন

May 2, 2009 by kallollahiri


বেঁচে থাকলে বয়স হতো ৮৮ বছর। খুব একটা বেশি কি? অনেকেই তো আছেন, অনেকেই সুঠাম…কর্মশীল। শুধু নেই বিশপ লেফ্রয় রোডের সেই বিখ্যাত ঘর আলো করে থাকা মানুষটা। যিনি আছেন ভেবেই কলকাতা খানিকটা নিশ্চিন্ত হত। যিনি আছেন টের পাওয়া যেত পুজোবার্ষিকীতে।

ফেলুদা চার্মিনারের ধোঁওয়া উড়িয়ে সর্বক্ষণের সঙ্গী তোপসে আর জটায়ুকে নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন নতুন কোনো জায়গায়, নতুন তদন্তের ভারে। প্রফেসার শঙ্কু মেতে উঠছেন তাঁর নতুন আবিষ্কারে, আর খবরের কাগজের শিরোনাম দখল করছে …নতুন ছবির কাজে হাত দিয়েছেন সত্যজিত।

আমাদের বাড়িতে সদ্য আসা শাদা-কালো টিভিতে খবর পড়ছেন ছন্দা সেন আর জনপ্রিয় ঘোষিকা শাশ্বতী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন আজকের ছায়াছবি ‘গুপীগায়েন বাঘা বায়েন’। দিনটা অনেক দিন আগের কোনো এক দোশরা মে…আমরা ডুবে যাচ্ছি গানে…
মহারাজা তোমারে সেলাম…সেলাম…সেলাম/ মোরা বাঙলা দেশের থেকে এলাম…
কিন্তু তারো আগে দেখে নিয়েছি পথের পাঁচালী।

বড় মাঠে পর্দা টাঙিয়ে ছবি দেখা। মফস্বলের হাটে…মাঠে…ঘাটে এইভাবেই ছবি দেখাতে আসতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ। গোটা পাড়ার সাথে আমিও গিলেছি গোটা ছবিটা। দাদার কাছ থেকে তখনি জানা হয়ে গেছে লক্ষ্মীর পাঁচালী ছাড়াও আরো একটা পাঁচালী আছে…সেটা পথের পাঁচালী। বাবা পুজোর সময় সন্দেশের সাথেই কিনে আনলেন আম আঁটির ভেঁপু। যে বইয়ের সচিত্র সংস্করণ করতে গিয়ে ডি জ়ে কিমারের তরুণ গ্রাফিক্স আর্টিস্ট সত্যজিতের মন বলবে এটাই তাঁর প্রথম ছবির বিষয়। মন বলবে এবার লেগে পড়ো।

সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ছোঁওয়া কোথায় গায়ে লাগছে না হরিহরের। তাকে উতপাটিত হতে হচ্ছে গ্রাম থেকে। হরিহর অন্নের সন্ধানে বাঙলা ছেড়ে ছুটছেন অন্য রাজ্যে। ছবি শেষ হচ্ছে গরুর গাড়ির ঝাকুনি…এক মন কেমন করা সকাল…অপুর সবিস্ময় ঘুম জড়ানো চোখ…সর্বজয়ার মুখে কাপড় গুঁজে কাঁদার অনুষঙ্গ।

“করেছেনটা কি”? বলা হয়েছিলো সত্যজিতকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় না হোক বলেছিলেন, আচ্ছা করতে দেওয়া হোক ছবিটা। টাকা না হয় সরকার দেবে। পি ডব্লউ ডি এর রাস্তা সারানোর টাকার খাত থেকে…কিম্বা এরকমই কোনো প্রজেক্ট থেকে টাকা দেওয়া হয়েছিলো। আর ছবিটা দেখে সংশ্লিষ্ট অফিসারের মনে হয়েছিলো পথের পাঁচালী মানে কোনো রাস্তা ঘাটের কথা টথা থাকবে।

একি মশাই কাঁচা রাস্তা…গ্রাম…চাকচিক্য হীন…একটা বুড়ি পিসি, পুরুত বাবা, রক্তাল্পতায় ভোগা মা, ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়া দিদি, পাঠশালায় পড়া ছেলে…এই কি প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার ভারত। করেছেন কি?

স্বাধীন দেশের পার্লামেন্টেও বেশ খানিকটা হই-চই হলো। বিখ্যাত অভিনেত্রী নার্গিস বললেন, ভারতের গরিবী বিক্রি হচ্ছে বিদেশের বাজারে। সরকারী আর্থানুকূল্যে…সরকারেরই ব্যর্থতার ছবি। শেম…শেম…শেম…।
প্রথম প্রধান মন্ত্রী জবাব দিলেন- ভারত যদি গরীবী পুষতে পারে তাহলে দেখাতে আপত্তি কোথায়?

কলকাতার লোকজন সেই প্রথম দেখেছিলো বড় বড় হোর্ডিং। কাশ ফুলের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে ভাই বোন। কোথাও বা নক্সা করা আলপনার পোষ্টার…“বিভূতিবাবুর সেই নভেলটা না” অনেকে ফিস ফিস করেছেন আর পথের পাঁচালী ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে একের পর এক পুরষ্কার। শুধু তাই নয় পরবর্তী কালের ভারতীয় চলচ্চিত্রের তাবড় পরিচালকেরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সত্যজিতকে…তাঁদের লেখায়…ছবিতে…। ঠিক এমন ভাবে শুরুটা না করলে হয়তো সত্যি এমন একটা ভারতীয় চলচ্চিত্রের এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরী হতো না। স্ব-সম্ভ্রমে বলেন শ্যাম বেনেগাল। যিনি পথের পাঁচালীর প্রিন্ট ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়াতেন। বন্ধুদের দেখাতেন। পরবর্তীকালে যিনি একটা বড় ডকুমেন্টারী করবেন সত্যজিতকে নিয়ে। পুণের ফিল্ম ইন্সটিটিউটে বসে পথের পাঁচালী দেখে ঘোর লেগে যায় গিরিশ কাসারাবল্লীর। প্রথম ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন। তৈরী হয় ঘটশ্রাদ্ধ। ছেলের নাম দেন অপু।

শেষ করবো যাঁকে দিয়ে…তাঁকে শেষে না রাখলে পাপ হবে। এক প্রবল পরাক্রমী ভাষায় ঋত্বিক সত্যজিত সম্বন্ধে বলেন, “সত্যজিত রায় এবং একমাত্র সত্যজিত রায়ই তাঁর শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তে আমাদের সত্য, নিশ্বাস কেড়ে নেওয়ার মতো সত্য-ব্যক্তিগত স্বকীয় সত্য সম্বন্ধে সচেতন করতে পারেন।” এঁদের দুজনের কেউই আজ নেই। কিন্তু রয়ে গেছে অফুরন্ত কাজের এক ভান্ডার। যাদের কাছে বার বার ফিরে ফিরে যেতে হয়। আর ঠিক তখনই বছরের প্রতিটা দিন হয়ে ওঠে দোশরা মে।
ভালো থাকবেন সবাই।

Category: ব্লগTag: ঋত্বিক, গুপগাইন বাঘা বায়েন, দোশরা মে, পথের পাঁচালী, সত্যজিত রায়, সত্যজিতের জন্মদিন

About kallollahiri

Previous Post:ডতাসতাসডত
Next Post:পঁচিশে বৈশাখ

eBangla.org