As always, I am confused with which movie to make next. Especially after RDB the next is a tough act to follow…
Rakesh Omprakash Mehra
আমরা দর্শকরাও বেশ কিছুটা চিন্তায় এবং আশায় ছিলাম Delhi-6 নিয়ে। শাদা পর্দার গায়ে আবার কোনো এক নতুন চমক দেখাবেন পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা এইরকম একটা আশা করছিলো মন। আসলে পরিচালকের প্রথম দিকের কাজ যদি প্রত্যাশা পূরণের চেয়েও অধিক কিছু দিয়ে দেয়, আত্মতুষ্টি করে দর্শককে এবং সেই সঙ্গে নির্মাতারও তাহলে পরের কাজে দায়িত্ব আরও বাড়ে। প্রথম কাজের গুনমান বজায় রাখার কিম্বা তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটা দায় বর্তায় পরিচালকের। সেই গুরু দায়িত্ব তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। পারেননি রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরাও। কাজেই নিজের বয়ানে তাঁকে লিখতে হয় ওপরের কথা গুলি।
Delhi-6 এর ঠিক আগেই Rang De Basanti। সেখানে আমরা দেখেছিলাম কয়েকজন যুবক-যুবতীর শিকড়ের খোঁজ। ব্রিটিশ জেলারের ডায়রী পড়ে ভারতীয় স্বাধীনতায় অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তার নাতনী। দাদুর সেই ডায়রী বুকে আঁকড়ে ভারতে আসে সে। ইচ্ছে এই বিপ্লবীদের ওপর ছবি করার সেই সময়কে চিত্রায়িত করার। এই বিদেশিনী সেইসব তরুন-তরুনীদের বোঝাতে চেষ্টা করে যারা ভারতের ইতিহাস থেকে শত সহস্র যোজন মাইল দূরে। এদেরকে নিয়েই শুরু হয় তার ভারতকে ফিরে দেখা। যে ফিরা দেখার উতস কিন্তু এক ব্রিটিশ জেলারের ডায়রী। ছবির অনেক স্তর পরম্পরা নির্মাণ করলেন এই ছবিতে পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা। একদিকে জেলারের ডায়রী, বিদেশিনীর ভারতীয় বিপ্লবীদের নিয়ে ছবি করার আকাঙ্খা অন্যদিকে ভারত সম্পর্কে নিরুতসাহ…নিজেদের স্ব-অবস্থান নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত তরুন সমাজ। যারা আস্তে আস্তে, ছবির অগ্রসরণের সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদেরকে আইডেন্টিফাই করবে তাদের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে। ছবির মধ্যে ছবি তৈরীর আর একটা গল্প। আর সেই গল্পের মধ্যে নতুন ভারতের খোঁজ। যে নতুন ভারতকে খুঁজে পাওয়ার জন্য অনুঘটকের মতো কাজ করছেন সেই বিদেশিনী। গল্পটা ইচ্ছে করেই আর বিস্তারিতের আখ্যানে নিয়ে গেলাম না। ধরেই নিলাম সবাই দেখেছেন ‘রঙ দে বাসন্তী’।
আর ঠিক এর পরের ছবি Delhi-6 – এ আমরা দেখলাম রোশন আমেরিকা থেকে তার ঠাকুমাকে সঙ্গে করে দিল্লী ফিরছে কারণ ঠাকুমার শেষ ইচ্ছে তাঁর দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার। দেশের মাটিতেই মিশে যাওয়ার। রোশন (অভিষেক বচ্চন) এর আগে দিল্লী আসেনি। তার বাবা মুসলিম মেয়ে বিয়ে করার পর দাদু তার একমাত্র ছেলেকে ত্যাজ্য পুত্র করেছিলো। কাজেই কেউ আর ফিরে আসেনি এখানে। অনেকদিন পরে রোশনের হাত ধরে বৃদ্ধা ওয়াহিদা রহমান ফেরেন নিজের ভিটেতে। পুরোনো দিল্লীর এক পুরোনো বাড়ির বিশাল সদর দরজা খোলে বহুদিন পরে। আর এক ঝটকায় পুরোনো দিল্লী হাজির তার রক্ত মাংসের চেহারায় বিনোদ প্রধানের দৃশ্য ভাবনায়… তাঁর সৃজনে। Delhi-6 তার শব্দে স্পর্শে তার নানা রঙের দিনগুলো নিয়ে আমদের সামনে ভেসে ওঠে। পরিচালক তাঁর ছবির নিজস্ব সাইটে (www.delhi6.co.in) জানান এই ছবিটি তাঁর কাছে কেবলমাত্র একটা Film নয়…এটা তাঁর কাছে এক অতীতচারীতা। তার ছোটবেলার সময়কে আরও একবার ফিরে দেখা।
আমরা অতীতের দিল্লী দেখি না। আমরা দেখি এখনকার দিল্লী রোশনের চোখ দিয়ে। যে দিল্লীর একান্নবর্তী পরিবার গুলো টুকরো টুকরো…যে দিল্লী মেতে থাকে রামলীলায় ঠিক আগের মতোই, শুধু তফাত থাকে তার রাজনীতিকরণে…যে দিল্লী গুজবে মাতে…জাতি দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে…যে দিল্লী স্বপ্ন দেখায় কোনো এক বাপের শাসনে অতীষ্ঠ মেয়েকে ইন্ডিয়ান আইডল হবার…স্বপ্ন দেখায় রোশনকে দিল্লীতে থেকে যাবার।
ছবির শুরুটা মজার…চমকের। এক কালো বিশালাকায় হনুমানের গুজবে অতীষ্ঠ দিল্লীকে দেখিয়ে। প্রথম দিকে কাহিনী বয়নের, তার সম্পাদনায় যে গতি থাকে ছবির মাঝেরও অনেক আগে গিয়ে তা যেন ক্রমে হারিয়ে যায়। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরার ছবিতে গল্পের যে তাতক্ষণিকতা দেখে আমরা অভ্যস্ত…যেটা তার চিত্ররূপায়ণের মুন্সিয়ানা Delhi-6 –এ তা অনুপস্থিত। রামলীলার উপস্থিতি এক অন্য মাত্রা সংযোজন করে নিঃসন্দেহে। রঘুবীর যাদবের গলায় গান গুলি কে নিয়ে পরিচালক নানা রকমের খেলায় মাতেন… কিন্তু এই মুন্সিয়ানা ব্যবহারে পরিমিতি বোধটুকুর পরিচয় থাকলে হয়তো ছবিটির ক্ষেত্রে মঙ্গল হত। তবে এই ছবির বড় প্রাপ্তি এই ছবিতে ছোট-বড় চরিত্রে সবার অসাধারণ অভিনয়। বিট্টু এখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা চরিত্র। সোনম কাপুর তাঁর আগের ছবির সব জড়তা কাটিয়ে নতুন একটা আবহ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন যেটা অভিষেক পারেননি। চিত্রনাট্যে এবং তার রূপায়ণে কয়েকটা গান অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাকি গুলো মন ছুঁয়ে যায় না।
বিদেশে এই ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে অভিষেক বলেছেন, “truly represents the India of today and the youth of today.” সত্যিই কি তাই? ছবিটা দেখে আমাদের হয়তো সবাইকে এবার একটু ভাবতে হবে। ভাবতে হবে কেননা এমন এক চরিত্রকে বার বার বেছে নেওয়া হচ্ছে যার সাথে ভারতের যোগাযোগ ক্ষীণ আর যে এসে আমাদের চোখে আঙুল বারবার দিয়ে দেখিয়ে দেবে দেখ এইগুলো তোমাদের ভুল। রোশন এই ছবিতে নিজের জীবন বিপন্ন করে ভুল গুলো বোঝায় দিল্লীকে…এখনকার ভারতকে…রোশনের মতো আর অন্য কোনো চরিত্রকে পুরো ছবিটায় খুঁজে পাওয়া যায় না, পরিচালক অন্য কোনো চরিত্রকে আনেন না রোশনের পাশে। সে নিজের পরিচয়ে ফিফটি-ফিফটি হওয়ার অপমান সহ্য করেও (বাবা হিন্দু মা মুসলিম,…সংলাপে এমন ভাবে বর্ণিত) শেষ পর্যন্ত দিল্লী থেকে যায় বিট্টুর ভালোবাসায়। কিন্তু রোশনের চরিত্রটা খুব একটা নির্ভরযোগ্যতা পায়না গল্প আর চিত্রনাট্যের বুননে। শেষে দাদুর আত্মার (অমিতাভ বচ্চন) সাথে তার কথোপকথন দর্শকের মনে যতটা না হাসির উদ্রেক করে ততটাই ছিবিটির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি ঘটায়। ছবিতে বেশ কিছু রূপক চরিত্রের মধ্যে তসবির ওয়ালাকে ভালো লাগে। যে একটা আয়না নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর সবাইকে মুখ দেখতে বলে। ছবির শেষে আয়নাটা ভেঙে যায়। আর তার আগে চলে প্রচুর জ্ঞান। আর বলা বাহুল্য এই জ্ঞানেই শেষ হয় ছবিটি যে ভারতীয় তথা বিশ্ব দর্শক এতো বোকা নয়…তাদের এতো জ্ঞান দেবার দরকার নেই। অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন বিভাগের কৃতী সব মানুষদের নিয়েও Delhi-6 মনকে স্পর্শ করতে পারে না। এক মনভার হওয়া আবহ নিয়ে বেশ কিছু দর্শক হল থেকে বেরোই অনেক রাতে…। প্রত্যাশার চাহিদা সত্যি এবার কমতে থাকে।
এই ছবি গুলি ব্যবহার করা হয়েছে www.delhi6.co.in এই সাইট থেকে। free download এর সুযোগে।