এক এগারোর পরে খুব দ্রুত পরিবর্তির্ত হয়েছিল দেশের পরিস্থিতি। ভীতিকর? না ঠিক ভীতিকর না তবে একটা চাপা উৎকণ্ঠা ছিলো তথাকথিত রাজনীতিবিদদের মাঝে। আর আমাদের মতো সাধারণ জনগণের ছিলো সুন্দর সুস্থ একটা দেশ দেখতে পাবার অধীর আগ্রহ।
আকাঙ্খার পাখিরা ডানা মেলতে শুরু করলো যখন আমরা বিস্ময়ে স্তম্ভিত (!) হয়ে লক্ষ করলাম এদেশের সূয র্সন্তানরা , এদেশের জনদরদী রাজপুত্ররা বা এদেশের অসীম ক্ষমতাশালী নেতারা (প্রকৃতপক্ষে যারা দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছিলো) দলে দলে দূর্নীতির দায়ে গ্রেফতার হচ্ছেন । দেশের কোটি কোটি বোকা জনগণের কাতারে মিশে গিয়ে আমিও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে সত্যিই বুঝি সত্যযুগ সমাগত । কিন্তু হায় ! রাতের যে তখনও অনেক বাকী।
দ্রব্যমূল্য বাড়া শুরু হলে তখন সুশীল সমাজের জ্ঞানীরা তত্ব দিলেন যে ব্যবসায়ীদের কে দূর্নীতির অভিযোগে আটক করার কারণেই এমন হচ্ছে; তাই ছাড় দেয়া হোক ব্যবসায়ীদের। আবারও আমরা বোকার মতো আশায় বুক বাধলাম । এর পর জীবনযাত্রার ব্যয়ভারে আমরা এতোটাই নুয়ে পড়লাম যে চোখকান বুজে শুধু বুকে আগলে রাখতে চেয়েছি আমার দুই শিশুসন্তানকে, নিজের পরিবারকে। ১৫ বছরের পেশাগত জীবনে জ্ঞানতঃ সৎ থেকে যে সামান্য পরিমাণ সঞ্চয় করতে পেরেছিলাম, কখন যে তা শেষ হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি , ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই প্রথম ধাক্কাটা খেলাম যখন বিজ্ঞ নেতৃত্বের “শায়েস্তা খা”র আমলের সাথে দ্রব্যমূল্যের তুলনা না করার পরামর্শ পেলাম । বিমূঢ় ভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেক মণীষির উপলব্ধি ” এবার এতো ভালো ফলন হওয়াতেই মানুষ ৪০ টাকায় চাল পাচ্ছে। নইলে তো ৭০ / ৮০ টাকায়ও চাল পাওয়া যেতোনা” । অতি সত্য কথা। তবে যেহেতু সহ্যসীমা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, তাই ভাবলাম ” ফলন ভালো হওয়াতেই এ অবস্থা ! খারাপ হলে কী উপায় হতো? কিন্তু আপনারা যারা দেশটা চালাচ্ছেন তাদের কাজটা কী? ফলন খারাপ হলে বাজারে দাম বাড়বে এটা তো বাচ্চারাও বুঝতে পারে। ” আমার এতোদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা বিবেক এবার আমাকে ধমক দিলো – “খামোশ গর্দভ ! এতো দামী একটা বাণী যদি শিশুরাই বুঝবে তো ওনারা আছেন ক্যানো? বাজারে জিনিসের দাম বাড়ার কারণ নির্ণয় করার জন্যই তো ওনারা শ্রম দিচ্ছেন (যদিও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) । ওনারা না বললে তোমার মতো মূর্খরা অর্থনীতির এই গূঢ় তত্ত্ব জানবে কী করে? তুমি কী দেখোনি যে উনি টেকনোক্র্যাট কোটার মন্ত্রীর মতো অর্থনীতিবিদ না হয়েও দেশের তাবত অর্থনীতিবিদের সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছেন?” সত্যিই তো, আমার তো মনেই ছিলোনা। আমি সত্যিই লজ্জিত। এরপর তো দেখছি একে একে সব রাজনীতিবিদই মানবিক, অমানবিক (?), সামাজিক ইত্যাদি নানা বিবেচনায় মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। ভয় হচ্ছে যেন সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। তো কিসের আশায় এতো কষ্ট করা, এতো ত্যাগ স্বীকার? আবারো সেই বিবেক বেচারার চাপা ধমক “You fool! Dont you know that History repeats itself? তুমি ভাবলে কী করে যে যতো আয়োজন গত বছর জুড়ে করা হয়েছে তার লক্ষ তোমাদের ভাগ্যোন্নয়ন? জানো তো যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে না আল্লাহ ও তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না। তোমরা তো বছর জুড়ে কেবল বেচে থাকার জন্যই যুদ্ধ করেছ, ভাগ্য পাল্টানোর চেষ্টা করার সুযোগই তো পাওনি। কিন্তু দেখো এই মেধাবী নেতৃত্ব কে, ওনাদের চেষ্টার ফলেই এখনো তোমরা ৪০ টাকায় চাল পাচ্ছো। ওনাদের পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশে তারার সংখ্যা বেড়েছে। অস্বীকার করতে পারো?” আমি লা-জবাব হয়ে গেলাম ।
পুনশ্চঃ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে চালের মূল্য টন প্রতি ৬০০ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ কিনা প্রতি কেজি ০.৬ ডলার বা প্রায় ৪২ টাকা। আমাদের লোকাল মার্কেটে কিন্তু সেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকাই রয়ে গেছে (যেটা স্থির করা হয়েছিল আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে, আন্তর্জাতিক বাজারে তখন চাল টন প্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ ডলার ছিলো )