হিজল গাছের সাথে অনেকেরই হয়তো পরিচয় নাই। বিশেষ করে শহরের মানুষদের। কেন জানিনা কয়েকদিন ধরে মাঝে মাঝে হিজল ফুলের কথা মনে পড়ছিল। কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না ব্যাপারটা কি। দৈনিক প্রথম আলোতে ফারুখ আহমেদ লিখেছেন হিজল গাছ ও ফুল নিয়ে ‘প্র কৃ তি – দেখুন হিজলের ফুল ‘। এতো সুন্দর করে লিখেছেন যে সবার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো- বিশেষ করে যারা জানেন না…
৯ মে শুক্রবার ঢাকা থেকে সোনারগাঁ হেঁটে গিয়েছিলাম। লিচুর মৌসুমে সোনারগাঁয়ে হিজল দেখে মুগ্ধ হলাম। এত হিজল একসঙ্গে দেখা পাওয়া কঠিন। সেই কঠিন কাজটি সহজ হবে সোনারগাঁ গেলে। হিজল আর হিজল, দেখে মনে হবে পৃথিবীটাই হিজলের!
হিজল মাঝারি আকারের চিরহরিৎগাছ। বাকল ঘনছাই রঙের ও পুরু। ডালপালার বিস্তার চারদিকে। উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার। জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে এবং বাঁচে দীর্ঘদিন। বাংলাদেশের জলাবদ্ধ এলাকা খাল, বিল, নদী-নালা, হাওর, বাঁওড় ও ডোবার ধারে সর্বত্র হিজল গাছ চোখে পড়বে। হিজলের নাম শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। হিজলের কাঠ নরম, সাদা বর্ণের, উজ্জ্বল ও মসৃণ। নৌকা তৈরি ও সস্তা আসবাব তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি হিসেবেও এর ব্যবহার ব্যাপক। এর বাকল থেকে ট্যানিন পাওয়া যায়।
হিজলের বৈজ্ঞানিক নাম Barring tonia acutangula Gaerln – গোত্র Myrtaceae – সংস্কৃত ভাষায় হিজলকে বলে নিচুল। এ ছাড়া নদী ক্রান্ত, জলন্ত, কার্ম্মক এবং দীর্ঘ পত্রক নামেও হিজল পরিচিত। উপকূলীয় অঞ্চলে হিজলের অন্য একটি জাতের দেখা পাওয়া যায়।
সমুদ্র দল নামের তেমনি একটি গাছ মানিকগঞ্জে গেলে চোখে পড়বে, যার বয়স প্রায় ২০০ বছর। মানিকগঞ্জের পারিলের মিয়াপাড়ার মঞ্জিলবাড়ির প্রাচীন ইঁদারার পূর্ব দিকে যার অবস্থান।
হিজল ফুল ফোটে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। গোলাপি রঙের হিজল লম্বা পুষ্পদণ্ডের মধ্যে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুল ফোটা শুরু হয়। সকালের আলোয় ঝরে যায়। হিজলতলায় সকালে গেলে মনে হবে গোলাপি বিছানা পাতা। গ্রামে-গঞ্জে পানির ওপর পড়া হিজল ফুলের আস্তরণ চেনা রূপ। রাতে বা ভোরে হিজল তলার সামনে দিয়ে গেলে বা দূর থেকেও এর মাদকতাপূর্ণ মিষ্টি ঘ্রাণে মাতাল হতে হয়! হিজল ফুলের গন্ধে মাতাল কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাই লিখেছেন, ’পিছল পথে কুড়িয়ে পেলাম হিজল ফুলের মালা। কি করি এ মালা নিয়ে বল চিকন কালা···’।
হিজল ফুল শেষ হলে গাছে ফল আসে। ফল তিতা, দেখতে অনেকটা হরীতকীর মতো।
হিজল ঢাকায় খুব কম দেখা গেলেও একেবারে দুষ্প্রাপ্য বলা যাবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হিজল বীথি রয়েছে।