আমার মা বাবার গর্ব মুক্তিযোদ্ধা রানার কাহিনী।
যদি ডাঃ অমুক , এডবোকেট অমুক লেখা যায় তবে কেন আমি আমার ভাইকে মুক্তিযোদ্ধা রানা বলতে পারব না।
আমার মাকে বললাম, মা ভাইয়ের কথা বল। মা বললেন রাতে বলব।
রাত হলো পড়া শেষে মার কাছে গেলাম, মার মন খারাপ, মা, মা, আমি ডাকলাম। মা বলল বস্ ।
আমার মার মুখের জবানিতে শুনুন ।
১৯৭১ সাল তোর ভাই তখন ক্লাস ৮ এ পড়ত, হটাত দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হোল, তোর ভাই দেখি উস খুস করে , আমি তখনই বুঝেছিলাম আমার ছেলেকে আটকানো যাবে না। ৪ , ৬ দিন পর তোর ভাই বাজারে যাওয়ার নাম করে বের হয়ে গেল আর কোন খবর নাই। আমি তোর বাবাকে বললাম আমার ছেলেকে নিয়ে আস, সারা দিন সারারাত খোজ করেও তোর ভাইকে পাওয়া গেল না।তোর বাবা চড়কা কিনে নিয়ে আসল. জোতিস বলেছে যে চড়কা উলটা ঘুড়ালে ছেলে ফিরে আসবে। যাওয়ার সময় রানা ( আমার ভাইয়ের নাম) ওর সাইকেলটা বিক্রি করে গেছে। এর পর দিন যায় মাস যায় বেটা আর আসে না। আমি চড়কা উলটা ঘুড়াই আর দড়জার দিকে চেয়ে থাকি।
হটাত ২ মাস পর রানা এল, আমি ওকে চিনতে পারিনি। আমাকে মা বলে জরিয়ে ধরল। আমি ওকে ধরে অনেক্ষন কাদলাম। আমার খুব গর্ব হলো ছেলে আমার মুক্তিযোদ্ধা । আমি তখন আওয়ামিলিগের তেজগা থানার সদস্য,এডভোকেট সাহারা খাতুন আমার ছোট জার বান্ধবি, এ ছারাও মিসেস জোহরা তাজুদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আমাদের বাসায় আসত, আমাদেও বাসায় মাঝে মাঝে মিটিং হত।
আমার ছেলে বলল সে ট্রেনিংয়ের জন্য ইনডিয়া গেছিল, এখন সে যুদ্ধে যাবে মায়ের দোয়া নিতে এসেছে। রানা যা তোকে দোয়া করি তুই পাকিস্থানি হানাদার বাহিনিকে খতম করে দেশকে স্বাধিন করবি ইনশাআল্লাহ। আমি ছেলেকে হাসি মুখে বিদায় দিলাম।
এর পর মাঝে মাঝে আসত আমাকে দেখার জন্য, একদিন এসে বলল মা আমি একাই ১০ জন পাকিস্থানি হানাদার বাহিনিকে খুন করেছি , মা খুব খুশি বাবাকে বলল দেখ ছেলে আপনার মত হয়েছে, আপনি যেমন ওদেও আদেশ এর পরও আফিস করছেন না, এটাও একটা মুক্তিযুদ্ধ। আপনার ছেলেও তাই।
একদিন ছেলে এসে আমাকে ওর রাইফেল দেখাল , আমাকে বলল মা আমাদেও জন্য দোয়া করো যদি আমি কোন মুক্তিযোদ্ধা পাঠালে তাকে খেতে দিও। আমি তাদের খেতে দিতাম । এভাবে চলতে থাকল। আরেকদিন এসে বলল আজকে শয়তানরা এয়ার পোর্টের পাশে বোমা ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।
দেশ স্বাধিন হলো আমার ছেলে আসল আমার কাছে, ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধিন হলো আমার ছেলে আসল ১৫ ই জানুয়ারি। আমরা সবাই খুব খুশি । আমি বলি যুদ্ধেও কাহিনি বল সে আমাকে সারারাত বলে ( এসব কাহিনি আপনাদের পরে বলব।)।
তার পর আসল কলংকিত ৮ই ফেবরুয়ারি , আমি ঘুমিয়ে আছি আমাদের বাড়ী ওয়ালার ছেলে সমীর সে খবর দিল রানা একসিডেন্ট করেছে, আমাকে জানানো হলো না রানা মারা গেছে। আমি নিস্চুপ হয়ে গেলাম, পরে আমার ছেলেকে আজিমপুর নতুন কবর স্থানে কবর দিল , বাংলাদেশ সরকারের ততকালিন প্রধান মন্ত্রী তাজুদ্দিন আহম্দে আমার ছেলের কবর আমাকে দান করল। বাসায় জেনারেল ওসমানি, এডভোকেট সাহারা খাতুন, মিসেস জোহরা তাজুদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী , ছাড়াও অনেক আয়ামিলিগ এর নেতা কর্মীরা এসেছিল, তারা আমাকে একমাস কোন রান্না করতে দেয়নি।
আর বলতে পারব না বাবা । বলে মা কাদতে খাকল, সে কান্না থামল পরদিন সকালে।