[নৈসর্গিক রূপকের আশ্রয়ের একজন সংগীতানুরাগী নিঃসঙ্গ পুরুষের (নীল পাহাড়) তীব্র প্রেমাকাঙ্খা, অতৃপ্ততা, হতাশা আর নির্লিপ্ততার পাশাপাশি তার প্রেমিকার (নদী) নিরব প্রেম নিবেদন, অপ্রকাশিত প্রেমের নিরুদ্ধ বেদনা, চাপা অভিমান এবং সবশেষে প্রেম প্রকাশের অপূর্ব মাধুর্য্য তুলে ধরার প্রয়াস; কাব্য-নাটিকা।]
নীল পাহাড়ের দিন কাটছিল চরম শুন্যতার মাঝে এভাবেঃ
বিষন্নতার মৌন নীল নির্ঘুম পাহাড়
অজানা পাখির গান শুনে কাটায় প্রহর
খোঁজে আর ডাকে সেই পাখিটিকে,
নীল পাহাড়ঃ কোথায় উড়ে গেলে নীল পাখি
ধরা দাও…কাছে এস…
বড্ড যে নিঃসঙ্গ লাগছে!
পাখিটা দেয়না ধরা
আসেনা কভুও কাছে
শুধু দূরে কোথাও
শুনে তার বিরহী সুরের প্রতিধ্বনি
নীল পাহাড়ের জীবনে প্রেমিকার (নদী) আবির্ভাবঃ
কোন এক বিষন্ন রাতের প্রান্তিকে
ঝড়া পালকের আলতো ছোঁয়ায়; ঘুম এলো তার দু’চোখ জড়িয়ে
নদী এল পা’য় পা’য় সেই রাতে। প্রশান্ত-
পাহাড়ের অলখে ছলকে ছুঁইয়ে গেল ঢেউ; পাহাড়টির চরণ
আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই
নদীটি আড়াল, জলের দাগে শুধু রেখে গেল তার স্মৃতি-চিহ্ন
নীল পাহাড়টি টের পেলো; তার ঘুমের ফাঁকে কেউ একজন এসেছিলো তার কাছে –
নীল পাহাড়ঃ তবে কি এসেছিলো নীল-পাখি? সমস্ত-
রোমকূপ জুড়ে কেন তবে মাতাল
করা সেই চেনা ঘ্রাণ?
নীল পাখি ফেরেনা
নদীও আসেনা আড়াল ভেঙে কাছে
মধ্য নদীর চোরা স্রোতে শুধু
বয়ে চলে তার অভিমানী ক্ষোভঃ
নদীঃ নদীকে বাঁধেনি কেন কেউ?
ডাকেনি অমন মোহন পিছু ডাকনীল পাহাড়ঃ যে যাবার যাবেই সে
শুনবেনা পিছু ডাক কারও; কোনদিনও।
বিড়বিড় করে বলে উঠে নীল পাহাড়
আর সে কথা শুনে শুধু তার মন পাখি
নদীর অভিমানঃ
একদিন ফুঁসিয়ে উঠেছে নদী অভিমানে
নোনা জল মিশে বেড়ে গেছে তার নাব্যতা
বিক্ষুব্ধ আছড়ে পরা জল-রাশির তোড়ে বিব্রত
পাহাড়ের উদাসীনতা
কারও শীতল স্পর্শে জেগে উঠলো পাহাড়টির অজানা আবেশ –
নীল পাহাড়ঃ কার ভেজা চুল ল্যাপ্টানো বুকের ‘পরে?
জড়িয়ে রেখেছে তাকে কার নিটোল বাহু-লতা
কার ঘন নিঃশ্বাসের শাবল; খুড়ছে কঠিন
পাথুরে মৃত্তিকা!
চিন্-চিনিয়ে বেজে উঠে
ব্যথার করুণ তার-সানাই
সর্বনেশে এমন ঘটনা ঘটেনি তো আগে!
ফুঁপিয়ে কেঁদেছে নদী অনুক্ত কথার স্রোতে
ফাল্গুনী হাওয়া বয়ে গেছে তার খোলা চুলে
নদীঃ আমি এসেছি
তোমার খুব কাছাকাছি
ভালোবাসা দাও এক চুমুক!
মৌনতা ভেঙেছে নির্বাক পাহাড়
প্রগলভ সে আজ খুশির জোয়ারে
নীল পাহাড়ঃ তবে কি তুমিই সেই নীল পাখি? যার
গানের পাগল করা সুর ভেসে আসে ইথারে
পদধ্বনি শুনি যার বার বার
যার পালকের চেনা ঘ্রাণে উতল আমার মনের বন, যার
কোমল আদরে থামে যতিহীন এ স্নায়ু-চাঞ্চল্য!
নদীটি অভয় পেয়ে কিছুটা যেন সপ্রতিভ হলো। কুল-কুল ধ্বনির স্রোতে নদী বললো তার না বলা সব মনের কথাঃ
নদীঃ যে গান তুমি শুনে গেছ এত কাল
সে আমারই গাওয়া,
যে পদধ্বনি শুনে চমকে ফিরেছ পিছু
সে আমারই নূপুর নিক্কন,
ঝড়া পালকের ছোঁয়া; সে আমার-
কোমল স্পর্শ মায়া!
আমারই স্রোতে ভেসে চলা শ্যাওলার ঘ্রাণে
উতলা আদিম প্রবৃত্তি তোমার,আর ওই নীল পাখি; সে-
তোমার মনের মন পাখি
হতাশার মাঝে যে তোমার আশার বর্তিকা
সাধনার ধ্যান
বেঁচে থাকার অনিন্দ্য আশ্বাস আর
কল্পিত ভুবনে মানস প্রেম।
নদীর কথায় আপ্লুত হলো নীল পাহাড়ের আবেগী মন। এতকাল যে এমনই সুন্দরের প্রতীক্ষায় ছিল সে। এতদিনে বুঝি দূর হলো তার ভোর অমানিশার কাল। এক এক করে ঝড়ে গেল নীল পাখিটিএ কষ্ট-পালক। নদীর জলে মুখ লুকালো নীল পাহাড়ের যাতনা সমগ্র। ক্লান্ত বিধ্বস্থ মন পাখিটি সমর্পিত হলো নদীর তরল অস্তিত্বে। নীল পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রবাহিত হতে থাকলো ভালোবাসার নির্ঝরিনি। আর আজলা ভরে পান করে চলল নদী তার প্রেম-জল।
আজও নদীটি বহতা তাই নির্ঝর জল স্বপ্ন রচনা করে।