• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

বাংলা ব্লগ । Bangla Blog

এভারগ্রীন বাংলা ব্লগ

  • ই-বাংলা
  • লাইব্রেরি
  • হেলথ
  • ইবুক

গল্পের শহর ডাবলিন

April 25, 2008 by Niaz

লন্ডনের মত স্বপ্নের শহর ডাবলিন নয়। নয় প্যারিসের মত শিল্পের অথবা নিউ ইয়র্কের মত বানিজ্যের শহর। ইউরোপের বৃহৎ এবং বর্নিল শহরগুলোর ভিড়ে ডাবলিন নিতান্তই একটা ছোট এবং ছিমছাম শহর। এ শহরের রাস্তায়, এমন কি খোদ শহরের কেন্দ্রে এখনও চোখে পড়ে ঘোড়ার গাড়ি। শহরের শতবর্ষী দালানগুলো যেন কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া একটি একুশ শতকের অধুনিক শহর আজও চলছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিনতলা কাঠের মেঝেতে গড়া ভবন দিয়ে। রাস্তার ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাড়ির গেট এবং লোহার দেয়ালের স্থাপত্য এখনও সেই এলিজাবেথিয় যুগের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আর সে জন্যই স্বপ্নের শহর না হলেও, গল্পের শহর ডাবলিন ষোলআনা।

মুক্তবাজার অর্থনীতির ঝাপটা আর কসমোপলিটন আবহাওয়ার প্রাদুর্ভাবও এতটুকু টলাতে পারেনি তাদের ঐতিহ্যকে। মাঝে মাঝেই দেখতে পাই রাস্তায় কাজ চলছে। অধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে তারা তৈরী করছে মধ্যযুগীয় ইমারত! ব্যাঙ্ক অব আয়ারল্যান্ডের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে যদি কেউ মনে করে যাদুঘরে ঢুকে পড়েছে, তবে সেটাকে ভুলের পর্যায়ে ফেলাটা বোধয় অবিচারই হবে। আর শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চারশ বছরের পুরোনো ট্রিনিটি কলেজের মিউজিয়াম বিল্ডিং-তো আসলেই একটা যাদুঘর। অথচ সেই যাদুঘরের চার দিকে ছড়ানো ক্লাসরুম! ক্লাস করতে করতেই ছাত্ররা ছুয়ে দেখছে এগারো হাজার বছরের পুরোনো প্রায় হাতির সমান উঁচু বন্য আইরিশ হরিনের কঙ্কাল। যদি বিস্ময় প্রকাশ করা হয় তাদের কাছে, নির্লিপ্ত উত্তর আসবে অনেকটা এমন – “যাদুঘর হয়েছেতো কি হয়েছে?”। এ যেন সকালে উঠে মুখ ধোয়ার মতই সাধারন তাদের জন্য। অবশ্য তাদের জন্য এটাই স্বাভাবিক কেননা পুরো ডাবলিন অথবা বলা যায় পুরো আয়ারল্যান্ডইতো একটা যাদুঘর!

এখানকার মানুষ থিয়েটারের পাগল। কয়েকদিন আগে রোমিও-জুলেয়ট হচ্ছিল এ্যবি থিয়েটারে। গিয়ে দেখি ২০/৩০ ইউরো খরচ করে মানুষ নাটক দেখছে যেখানে সিনেমা হলে আই এ্যাম লেজেন্ড চলেছে এর অর্ধেকেরও কম দামে এবং দেখার আগ্রহ খুব একটা ছিল না কারো। এই যে এ্যবি থিয়েটার, এটাও একটা ঐতিহ্য। এ্যাবি হচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি ইয়েটস-এর প্রতিষ্ঠা করা থিয়েটার এবং প্রথম জীবনের কর্মক্ষেত্র। যদিও দেখে বোঝার উপায় নেই এটা এতটা তাৎপর্যপূর্ন একটা থিয়েটার। যদি কোন আইরিশকে প্রশ্ন করা হয় – এটা নিয়েতো তোমরা রিতিমত গর্ব করতে পারো, যাদুঘর বানিয়ে ফেলছো না কেন? – উত্তরে হয়তো বলবে – “তো? সব কিছুই কি যাদুঘর বানাতে হবে নাকি?” আসলেই তাই। খানিকটা হেটে সামনে যান, জর্জ বার্নার্ড শ এর বাড়িও দেখতে পাবেন। ক্লনটার্ফ-এ ব্র্যাম স্টোকারের ড্রাকুলাকে নিয়ে একটা যাদুঘর আছে। দেখতে যাবার কথা শুনে আইরিশ বন্ধুরা চোখ বাঁকা করে বলেছিল “কি আছে দেখার?” বললাম কিছু না থাকলেও ব্র্যাম স্টোকার বলে কথা। তারাও হেসে বলেছিল “তো? সেতো আমাদের ডিবেটিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিল”। আমি প্রমাদগুনলাম। ভাগ্যিস অস্কার ওয়াইল্ড অথবা জোনাথন সুইফটকে নিয়ে কথা বলিনি। তা না হলে হয়তো বলে বসতো ওয়াইল্ডের সাথে অরেকটু আগে জন্মালে ডিবেটই করার সুযোগ হতো কিম্বা তাদের কোন প্রপিতামহের বন্ধুছিল সুইফট যখন তারা একসাথে ট্রিনিটিতে পড়তো। কিছুই বিচিত্র না। এখানে সবই গল্পের মত শোনায়।

এসব যাদুঘর দেখার থেকে ডাবলিনের মানুষ পছন্দ করে পাবে যাওয়া। এখনও ডাবলিনের পাবগুলোতে চলে গিগের পরিবেশিত সংগীতের সাথে শতবর্ষী গিনিজ-এর মদ। ভাবতে অবাক লাগে এই রক-এন-রোলের যুগে এখনও তারা মদের নেশায় বুদ হয়ে শোনে কান্ট্রি সং! ডাবলিনারস বা অন্য কোন ব্যান্ডের আজব সুরে এবং প্রাচিন আইরিশ গ্যালটিক ভাষায় গাওয়া গানের সিডিগুলো যখন এইস.এম.ভি.-এর স্টোরে মুহুর্তে শেষ হয়ে যায় তখন টুপি খুলে তাদের সত্যই সালাম জানাতে ইচ্ছে হয়। দেশাত্ববোধ তাদের প্রবল, আর সেই রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ায় ডাবলিন যেন অন্য শহরগুলোর প্রতিভূ হয়ে পুরো বিশ্বকে আমন্ত্রন জানাচ্ছে।

ডাবলিন শহরের মাঝেই রয়েছে সমুদ্র। উত্তাল ঢেউ দেখে যে মুগ্ধ হয়ে কিছু সময় বসে থাকবো, সে সুযোগ নেই। সমুদ্র পাড়েই বসে বসে দেখা যায় ডাবলিনের আরেক প্রান্তের সুউচ্চ পাহাড়গুলোকে, তারা যেন ক্রমাগত হাতছানি দিয়ে ডাকছে। দক্ষিন ডাবলিন পুরোটাই পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো। ভাবতে অবাক লাগে আজও একটা রাজধানী শহরের ভেতরেই সুউচ্চ গাছে ঢাকা বনানী অথবা পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা সভ্যতার নির্জন সৌন্দর্য দেখা যায়, কিম্বা দেখা যায় উন্মাতাল সমুদ্রের পাড়ে নির্ভাবনায় মগ্ন সমুদ্রস্নানরত মানুষের নিরব কোলাহল।

যদিও কিছুদিন ডাবলিন থাকলে আর কোনও কিছুতেই অবাক লাগার কথা না। কারন একুশ শতকের কালের ঘড়ি যে এখানে এসে থমকে গেছে। আর সেজন্যইতো ডাবলিন লন্ডনের মত স্বপ্নের শহর না হয়েও ষোলআনা গল্পের শহর হয়ে আছে।

৪ এপ্রিল ২০০৮

Category: ব্লগTag: আয়ারল্যান্ড, ডাবলিন

About Niaz

Previous Post:একটি গল্প লেখার জন্য…
Next Post:কবিতা

eBangla.org