• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

বাংলা ব্লগ । Bangla Blog

এভারগ্রীন বাংলা ব্লগ

  • ই-বাংলা
  • লাইব্রেরি
  • হেলথ
  • ইবুক

“সুলতা বনাম বনলতা সেন”

July 10, 2013 by এস ইসলাম

সুলতা বনাম বনলতা সেন-Sulota“সুলতা বনাম বনলতা সেন”
একটি তুলনামূলক কাব্য বিশ্লেষণ
–ডঃ সৈয়দ এস আর কাশফি

কবি শফিকুল ইসলামের কবিতায় তার কাব্য প্রেয়সী সুলতার যে নান্দনিক ও শৈল্পিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় তা সামগ্রিক ও কাব্যময়। কবি জীবনানন্দ দাসের বনলতাসেনের মতো কোন খন্ড চিত্রকল্প নহে। বর্ণনা এখানে সফল, কাব্যময় এবং জীবন্ত। জীবনানন্দদাস বনলতা সেনের মুখশ্রী ও চুলে কাব্য সৌন্দর্য্য খোঁজে ফিরেছেন। যা নিতান্তই খন্ড চিত্র। যেমন তিনি বলেছেনঃ–
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য”…
এখানে বনলতা সেনের সফল সৌন্দর্য বর্ণনা আমরা খোঁজে পাইনা। প্রায় অন্ধকারের মত তার চুল দেখার ঝাপসা আকুতি ও কাল্পনিক শ্রাবস্তীর মতো তার মুখের আদল। অন্যপক্ষে সুলতা প্রসঙ্গে কবি শফিকুল ইসলামের কাব্যময় উচ্চারণঃ–

 

“সুলতা, তুমি আমার
বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত
তাজা গোলাপদেখার অনুভূতি।
…………………
সুলতা তুমি আমার আধার আকাশে
একটি চাঁদের মত
একটি নিটোল নিভাজ স্বপ্ন,
একটি সজীব কবিতা,
চির ঝংকৃত সুরে একটি ছন্দ দ্যোতনা,
শিল্পীর আকা যেন একটি জীবন্ত ছবি”…
[কবিতাঃ সুলতা তুমি আমার] (শ্রাবণ দিনের কাব্য)
পাঠক মাত্রই জানেন সৌন্দর্য বর্ণনায় তাজা প্রস্ফুটিত গোলাপের উপমা একটি সফল উপমা। তাজা গোলাপ দেখার মতো রূপময় অনুভূতি পৃথিবীর আর কোন সুন্দর সৃষ্টিতে খুঁজে পাবেন না। একমাত্র প্রেয়সীর দৈহিক সৌন্দর্য ছাড়া। এখানে কবি শফিকুলের বর্ণনা তার কাব্য প্রেয়সী প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপ দেখার অনুভূতি যা সুন্দরতম সুন্দর। তার মনে কাব্য প্রেয়সী সুলতা তুলনাহীনা অপরূপা ও সৌন্দর্য ময়তায় ভরপুর। কবির দৃষ্টিতে সুলতা তেমনি এক সুন্দরী প্রতিমা ।
জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনে সে রকম কোন জোরালো বর্ণনা আমরা খোঁজে পাই না। জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের মুখে দেখেছেন শ্রাবস্তীর কারুকার্য যা কাল্পনিক ও অনেকটাই পুরনো। অন্য পক্ষে কবি শফিকুল ইসলাম সুলতার মুখে এমন এক জ্যোতি দেখেছেন যা প্রাণের কাছাকাছি, ভালবাসা মাখা ও কালোত্তীর্ণ। সে জন্যেই সে জ্যোতির অনুপস্থিতিতে কবি হয়েছেন আর্ত, বিমর্ষ ও ক্লান্ত। জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের মুখশ্রী দেখে ক্ষনিকের জন্য আমোদিত হলেও তা ছিল নিতান্তই ক্ষনিকের ভালবাসা। ভালবাসা নহে এবং প্রেম ও নহে। তাই সে মুখশ্রী দেখতে না পেলে কবির হৃদয়ের কি আকুতি বনলতা সেনে তা আমরা পাই না। কিন্তু কবি শফিকুল ইসলামের সফল কাব্য সুরঃ–
“সুলতা একদিন যে মুখে
এক অপার্থিব আলো দেখেছিলাম
যে আলোর মোহে
পতঙ্গ আগুনের উত্তাপ ভুলে গিয়ে
ঝাপিয়ে পড়ে প্রাণ দেয়।
সুলতা সেই মুখে আজ
এ কোন কালো মেঘের ছায়া।”
[কবিতা : সুলতা একদিন যে মুখে] (শ্রাবণ দিনের কাব্য)
হেলেন বিশ্বের সুন্দরী শ্রেষ্ঠা। তার সৌন্দর্য দেখে ট্রয় নগরীর বৃদ্ধরাও অভিভুত হয়ে যেত। সে নারী মাত্র নয়। সে অমর দেবীর অবিকল প্রতিমূর্তি।। হেলেন কাম সৌন্দর্য ও ঔজ্জ্বল্যের প্রতীক। অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলামের সুলতা এক অপরূপা নারীর মূর্তির প্রতীক যিনি দেবী না হয়েও কবির মনে দেবীর আসনে অধিষ্ঠিতা। রক্ত মাংসের নারী হয়েও পূঁজার বিগ্রহ রূপে কবির মনকে করেছে আন্দোলিত। দিয়েছে প্রশান্তির অনাবিল ছোঁয়া। ক্ষণকালের জন্য নহে অনন্তকালের জন্য। তাই কবির সফল উচ্চারণঃ–
“তোমাকে বাদ দিলে
ভালো লাগার মত এই পৃথিবীতে
আমার আর কিছুই নেই”।
[কবিতা: সুলতা এই জীবনে] (তবুও বৃষ্টি আসুক)
বনলতা সেনে কবি জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের অভাবের বিরহ যন্ত্রনার কোন সুর তোলেন নি। তার মানে বনলতা সেনকে ভালবাসেন বলে মনে হয় না যদিও আঁধারে সঙ্গিনী হিসেবে তার মনে পাওয়ার আকাঙ্খা অত্যন্ত প্রবল। এটাকে প্রেমের আকুতি বলা যায় না কিংবা ভালবাসার প্রার্থনাও বলা যায় না। এখানে কবি জীবনানন্দ দাসের ব্যর্থতা।
কবি শফিকুল ইসলাম প্রেমের এক সফল কবি। তিনি অঝোর শ্রাবণ ধারায়, রিমঝিম বৃষ্টিতে, আলো আঁধারের কাব্যময় খেলায় ও চেতনার চন্দ্রিমায় তার কাব্য প্রেয়সী সুলতাকেই কি চান। তার কালোত্তীর্ণ সব কবিতাগুলোর পরতে পরতে, ছন্দে, উপমায় ও কাব্য অলংকারে সুলতার অপরূপ রূপের বর্ণনা প্রগাঢ় ও চিত্রময়। কবির মন সুলতাকে জগতের সকল উপমার উর্ধ্বে অন্য এক অনন্য উপমায় খুঁজে ফিরছেন। সেই জন্য দৃঢ় উচ্চারণঃ–
“তোমার উপমা শুধু তুমি
তুমি আছ সব সৌন্দর্যের মাঝখানে
সৌন্দর্যের রাণী হয়ে সগৌরবে মহিয়সী”
[কবিতা : সুলতা যখন তোমায় দেখি] ( শ্রাবণ দিনের কাব্য)
কবি পুর্নেন্দু পত্রী তার কাব্য-প্রেয়সী নন্দিনীর রূপে বিমোহিত হয়ে যেমন বলেছিলেনঃ–
“কেন্দ্রে আছ তোমাকেই
সূর্যরশ্মি আছে ঘিরে
নন্দিনী পুরনো হলে
পৃথিবী পাবে শ্বাশ্বতীরে।”
তেমনি কবি শফিকুল ইসলামের কাব্য প্রেয়সী সুলতা ও অনন্ত মাধুরীময়, অপরূপা ও কাব্য মাধুর্যমন্ডিত যা কখনই পূর্ণ হবার নয়, হয় না। কবির মনে সে চিরদিনই সুলতা, চির যৌবনা সুলতা, চিরকাব্যময় সুলতা, হৃদয়ের সুলতা, প্রাণের সুলতা ও স্বপ্নের সুলতা এক কথায় ভালবাসার সুলতা। যা কবির মনে চিরদিনই প্রেমের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে নিশিদিন। তাই কবির কাব্যময় উচ্চারণঃ–
“তোমার রূপের আলোয়
আমার বিশ্বভূবন উদ্ভাসিত–
তুমি ছাড়া আমার সবই অন্ধকার”।
[কবিতা : সুলতা যখন তোমায় দেখি] ( শ্রাবণ দিনের কাব্য)
অন্যদিকে কবি জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনকে যদিও নাটোরে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন তবু সে তার চোখে অপরূপা ও তুলনাহীনা নহে। বিদিশা নগরীর শ্রাবস্তীর মতন এক নারীকে অন্ধকারে আকাঙ্খা করেন। এই আকাঙ্খা কখনও কাব্যিক নয় এবং শিল্পমাধুর্য বর্জিত। ভালবাসা না পাওয়ার স্বস্তি তিনি বনলতা সেনের আবেদনময়ী সৌন্দর্যে খুঁজে ফিরেছেন দুদন্ডের প্রশান্তির জন্য। কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেনঃ–
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশিথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।”
[কবিতাঃ বনলতা সেন] (বনলতা সেন ও মহাপৃথিবী)
পাঠক একটু মনযোগ দিয়ে খেয়াল করুন; কবি জীবনানন্দ দাস হাজার বছর ধরে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে পথ হেঁটেছেন কার জন্য? বনলতা সেনের জন্য? নাকি অন্য প্রেয়সীর জন্য? যদি বনলতা সেনের জন্য হতো তাহলে সে তার অন্তরে চিরন্তন প্রেমের এক উজ্জ্বল উন্মাদনা ছড়িয়ে দিত যা হতো অনন্তকালের দু-দন্ডের জন্য নয়। কারণ যাকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে পেয়েছেন সে শুধু হবে দু-দন্ডের সঙ্গিনী সে হতে পারে না। কারণ প্রগাঢ় ভালবাসায় যাকে পাওয়া যায় সে মনে চিরন্তন প্রেমের পরশ বুলিয়ে দেয় যা কোন প্রেমিক কখনই ভুলে যেতে পারে না। দু-দণ্ড কেন হাজার বছরে ও যা ভুলে যাবার নয়। সুতরাং একথা সু-স্পষ্ট যে বনলতা সেনকে তিনি কখনই খোঁজেন নাই। পথ হাঁটার ক্লান্তিম মুহুর্তে দু-দন্ডের শান্তির জন্য ক্ষণকালের সঙ্গিনী করেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় কিভাবে বনলতা সেন কালোত্তীর্ণ কবিতা। অন্তত কবির ভাষ্যে সে দু-দন্ডের সঙ্গিনী ক্লান্তিময় পথে।
অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলাম সাফ সাফ বলে দিয়েছেন তিনি সুলতাকেই খুঁজছেন, সুলতার কাছেই যাবেন এবং চিরতরে তার কাছেই থেকে যাবেন, এমনকি কোনদিনই তাকে ছেড়ে যাবেন না। প্রেমের সফল কালোত্তীর্ণ উচ্চারণ এর চেয়ে আর কি বা হতে পারে। তার প্রেমময় উচ্চারণঃ–
“সুলতা তোমার কাছে যাবো
বর্ষার খরস্রোতা ভরা নদী সাতরে
আমি তোমার কাছে যাবো
রৌদ্রদগ্ধ মরুভূমির তপ্ত ধু ধু বালিরাশি
নগ্নপদে পার হয়ে
তোমার কাছে যাবো।
……………………..
সুলতা,সত্যি সত্যি দেখো একদিন
সব লোকলাজ দ্বিধাদ্বন্দ ছুড়ে ফেলে
আমি তোমার কাছেই চলে আসবো চিরতরে
হঠাৎ করে তোমাকে চমকে দিয়ে,
তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও
ফিরে যাব না, যাব না”
[কবিতা সুলতা তোমার কাছে যাব] (শ্রাবণ দিনের কাব্য)
এবার আসা যাক বনলতা সেন ও সুলতা কাব্য চরিত্রের তুলনামূলক রূপক ও উপমার চারণভূমিতে। বনলতা সেনের উপমার বাগান বড় বেশী পুরনো ও ভয়াবহ। জীবনের উত্তাল ফেনায়িত হতাশায় কবি জীবনানন্দদাস বনলতা সেনকে দেখেছেন এবং সৌন্দর্যের রূপময় বর্ণনায় শুধুমাত্র চুল ও মুখশ্রীর কথা উল্লেখ করেছেন যা একটি অসম্পূর্ণ বর্ণনা ও প্রাচীন যুগের উপমা। আধুনিক যুগের চেনাজানা কোন সফল উপমা নহে। যা আত্মস্থ করতে গেলে পাঠককে ইতিহাসের দূরতম কুয়াশার পথ হাঁটতে হবে যা সাধারণ পাঠকের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ এক শ্রেণীর পাঠক ছাড়া ঐসব দূর্বোধ্য উপমা কেউই বুঝতে সক্ষম হবেন না।
অন্যদিকে সুলতা প্রসঙ্গে কবি শফিকুল ইসলামের উপমার বুনন বড় বেশী কাব্যময়, সুন্দর, আধুনিক ও চির পরিচিত। কবি শফিকুল ইসলামের সুলতাকে খুঁজতে পাঠককে দূর অন্ধকারের বিদিশা নগরীতে যেতে হবে না। আমাদের চির পরিচিত চেনা শহরেই তার মায়াবী দৃষ্টির ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যাবে। কবিও তাকে তার চেনা শহরেই খুঁজে ফিরেছেন, পেয়েছেন। এই চেনা শহরেই দেখেছেন সুলতার ভাস্কর্যমন্ডিত পদচিহ্ন যা বৃষ্টি জলে মুছে গেলেও কবির হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। এমনই এক প্রেমময়ী নারী সুলতা।
এবার আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেব কাব্য চরিত্র সুলতা ও বনলতা সেন নারী চরিত্র হিসেবে কোনটি সফল সেই দিকে। জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের নারী চরিত্র ব্যর্থ ও দু-দন্ডের সঙ্গীনি মাত্র। নারী চরিত্রের আর কোন বৈশিষ্ট্য আমরা বনলতা সেনে পাই না। সবই যেন ধূম্রজাল ও ক্ষণিকের জন্য। অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলামের সুলতা এক অনন্যা নারী মূর্তির প্রতীক। তাই তো কবির সাহসী উচ্চারণঃ–
“সুলতা, তোমার শাড়ীর আঁচল
আমার বিজয় পতাকা।
সুলতা, তোমার হৃদয় আমার স্বদেশ
সুলতা, তোমার মুখশ্রী আমার সংবিধান”।
[কবিতা: সুলতা এই শহরের] (শ্রাবণ দিনের কাব্য)
এখানে কাব্যপ্রেয়সী সুলতা অপরূপা এক নারী মূর্তির রূপক যা কবিকে সারাণ অনুপ্রেরনা দেয় কর্মে, বিজয়ে ও চিন্তায়। কবি শফিকুল ইসলামের কাব্যপ্রেয়সী সুলতা এমনই এক সফল নারী যা কবির জীবনে সকল সময়ের স্বপ্ন, অহোরাত্রির আনন্দ ও জীবনভর প্রশান্তির ছোঁয়া। যাকে হারালে যেন কবির সব কিছুই হারিয়ে যাবে এমনকি বাঁচার আকুতিও। এখানে সুলতা চরিত্রের কাব্যিক সফলতা।

 

কে সেরা, সুলতা না বনলতা সেন ?

Category: ব্লগTag: “সুলতা, বনলতা, বনাম, সেন”

About এস ইসলাম

Previous Post:একুশে বইমেলার কাব্যগ্রন্থ “দহন কালের কাব্য‍”
Next Post:‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

eBangla.org