বাড়িতে কুকুরের সংখ্যা সাড়ে তিন। খাওয়ার সময় তিনটা কুকুর রান্নাঘরের আসে-পাশে ঘুর ঘুর করে কিন্তু মনের ভুলেও ঘরে বা বারান্দায় উঠে আসে না। সেখানের দখলদারিত্ব একমাত্র বিড়ালটার। বারান্দায় খাবার দিলে পুরোটাই নিশ্চিন্তে-নির্ভয়ে ভোগ করে বিড়ালটা। আর কুকুরগুলা কলতলায় শুয়ে শুয়ে ঘাড় উঁচু করে একটু গরগর করে বিড়ালটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে। ধমক দিলে আবার চুপ করে শুয়ে পড়ে। তাদের খাওয়ার জন্য কলতলায় আলাদা আলাদা জায়গা আছে।
কুকুর তিনটার কাজ হলো বাড়িতে অপরিচিত বা সন্দেহজনক কিছু দেখলে হাউকাউ করে সারা বাড়ি এক করা। রাতে বাড়ির বাইরে বের হলে দু-একটা কুকুর পিছু নেয়। একটা নির্দিষ্ট সীমানা পর্যন্ত আসে। ফেরার সময়ও সেগুলাকে সেখানেই দেখা যায়। এসেই গায়ের উপর লাফিয়ে পড়ে। অবাক লাগে এদের সাথে পরিচয় খুব একটা বেশি সময়ের নয়। খাবার-টাবারও খুব একটা দেই না। তবুও…
বিড়ালটার খাওয়া আর ঘুম ছাড়া তেমন কোন কাজ দেখি না। খাওয়ার সময় খাবার দিতে দেরী করলে দুই পা উঁচু করে পায়ে ধাক্কা দেয়। গা না করলে পরের বার আঁচড় দেয়।
বাবার জন্য সবসময় আলাদা একটা থালে ভাত বাড়া হয়। বিড়ালটি সেটা বুঝতে পারে। দেখেই সে ঘরের ভিতরে গিয়ে বাবার পায়ে ধাক্কা মারে এবং রান্না ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করে। বাবা না এলে আবার গিয়ে আঁচড় দেয়।
আর দিবানিদ্রাটা রুমের দরজা খোলা থাকলে বিছানার এককোণে সারতে চায়। তবে সে সুযোগ তাকে দেয়া হয় না বেশির ভাগ সময়।
সাড়ে তিনটা কুকুরের বাকি অংশটুকু-
এটা খুব উন্নত জাতের কুকুর। (নাম জানি না।) মনে হয় অন্য কারো খুব আদর যত্নে পালিত। দেখতে একটা ছোটখাটো ভাল্লুকের মত। কোথা থেকে আর কেন যে আসে, কেউ জানে না। এসে অনেকদিন থাকে। আবার কিছুদিনের জন্য হাওয়া হয়ে যায়। এটি এলে বিড়ালটির অবস্থান হয় ঘরের চালের উপর, কারণ এই কুকুরটি পুরো ঘরের দখলদারিত্ব নিয়ে নেয়। এমনকি রাতে ঘরের মধ্যে দরজার পাশে আলাদা বিছানা পেতে না দিলে ঘুমায় না।
গ্রাম্য জীবনের সহজ-সরলতার নানা বৈচিত্র- একটু ভিন্ন আঙ্গিকে দেখলে খুব সহজেই চোখে পড়ে। মনে হয়, ঈশ্বর যদি থাকেন, তিনি শুধু এই গ্রাম্য জীবনেই থাকবেন।
[ বিঃদ্রঃ কুত্তা-বিলাইগুলার লাইগা আমগো বাড়িতে ঈশ্বর থাকেন না। ]