অঘা-মঘা এক ছাত্র। তবুও কেন জানি সবাই দেখা হলেই পড়াশুনার কথা জিজ্ঞেস করে। লজ্জা পাই। তাই লোক-সমাবেশ এড়িয়ে চলি।
স্কুল ফাইনাল হয়ে গেছে। এধার ওধার থেকে বিয়ে বা শ্রাদ্ধ্বের নিমন্ত্রণ আসে। অফুরন্ত সময় বিধায় বড়রা কেউ যাওয়ার সময় ঠেলে-ঠুলে আমাকেও নিয়ে যায়।
এরকমই এক রাতে এক বিয়ে বাড়িতে খেতে গেছি। বিশাল আয়োজন।
মোটামুটি খাওয়ার পরে মাংশ আসছে। সার্ভিসে বড় ভাইয়েরা। এসময় চোখাচোখি হওয়াটা লজ্জাজনক। কম দিক, বেশি দিক- দিয়ে চলে যাক। তারপর যা দিয়েছে সেটাই খেয়ে নিতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার জায়গাটা ডেকরশনের লোকেরা চারদিকে কাপড় দিয়ে একটা ঘরের মত করে দেয়। তাই যখন খাবার দিচ্ছে তখন অন্য দিকে তাকাতেই কাপড়ের ফাক দিয়ে বাইরে চোখ গেল। সেখানে ময়লা জামা-কাপড় পরা একটা মেয়ে বুকের উপর একটা ভাঙা থালা চেপে ধরে বড় বড় চোখ করে আমার দিতে তাকিয়ে আছে।
আমি সহসা চোখ ফেরাতে পারলাম না। বড় এক ভাই আমার তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝে ফেলল বাইরে একদল ভিক্ষারী দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে বলতেই সে বাইরে গিয়ে- এই গেলি নাকি কুত্তা ডাকুম- বলে হুঙ্কার দিতেও ওরা খিলখিল করে হাসতে হাসতে কিছুটা দূরে সরে গেল। আমি জানি আমাদের খাওয়া যত শেষ হবে, ওরা ততই আমাদের আরো কাছে এসে দাঁড়াবে। এবং শেষ পর্যন্ত ভাগে কিছুই জুটবে না শুধু উচ্ছিষ্ট ছাড়া। তাও কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে কেউ কেউ বঞ্চিত হবে। এরা পরে খুঁজবে ভাগাড়ে গিয়ে যেখানে অনেক আগে থেকেই নেড়ি কুকুরের দল ভাগাভাগি শুরু করে দিয়েছি।
ওই মেয়েটির সেই তাকিয়ে থাকা দেখে আর ঠিক মতো খেতে পারছিলাম না। ভাগ্য ভালো সেই স্মৃতি আমাকে বেশি বার মনে করতে হয়নি, কেননা তারপর থেকে ভূরিভোজের আয়োজনে যোগ দেয়ার সুযোগ আমি বেশি নেইনি।
আজ ফেসবুকে এই ছবিটা দেখে কেন জানি ঘটনাটা আবার মনে পড়ল।