আমার কাজ আর মায়ের হসপিতালের appointment একই সময়ে- সকাল নয়টায়। এর আগেও কয়েকবার এমন হয়েছে। এই সময়ে হলে একটু আগে বেড়িয়ে পড়ি। মাকে হসপিতালে নামিয়ে দিয়ে কাজে চলে যাই। ফেরার সময় একাই ট্রেনে করে চলে আসে।
যাওয়ার সময় বলল একটা ভুল করে ফেলেছে। তার এই “ভুল”গুলো আসলেই খুব মারাত্মক টাইপের হয়। নড়েচড়ে বসলাম। সপ্তাহ দুয়েক আগে আরেকটি appointment ছিল। তখন কিসব টেস্ট করার কথা ছিল। সেটা মিস করেছে! আর আজ ডাক্তার সেটার রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। বললাম তাহলে আজ গিয়ে লাভ কি? কল করে নতুন করে আবার appointment নাও। কিন্তু কল করলে দেরীতে appointment দেয়। তাই গিয়ে ডাক্তারকে বললে যদি আরো আগে পাওয়া যায়…
দুপুরের দিকে মা কল করল। দেখলাম বাসার নাম্বার। বুঝলাম বাসায় এসে গেছে। কিন্তু হসপিতালের কথা না বলে শুরু করল আরেক কাহিনী-
হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় দেখে ফুটপাতে একটা বাঙালী ছেলে বিছানা-পত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব টেনশন নিয়ে এদিও-ওদিক তাকাচ্ছে। মাকে দেখেই দৌঁড়ে এসে এসে তার হাত-পা জড়িয়ে ধরল। কি ব্যাপার? তার আজই একটা বাসার দরকার। অন্ততঃ আজকের রাতটা থাকার জন্য হলেও।
ছেলেটার হসপিতালের কাছেই একটা সুপারস্টোরে কাজ করে। পাসপোর্ট আছে। দেশে গিয়ে বিয়ে করে এসে বউয়ের জন্য এপ্লাই করেছিল। বউয়ের ভিসা হয়ে গেলে ছেলেটা কিছুদিন সময় চেয়েছিল যাতে সে আগে আলাদা একটা বাসা নিয়ে সব গুছিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বউ আর ধৈর্য ধরতে পারেনি। টিকিট কেটে চলে এসেছে।
ছেলেটা একটা বাসায় রুমমেট হিসাবে থাকে। সেখানে বউ নিয়ে থাকার মত অবস্থা নেই। তবুও বউকে নিয়ে দুদিন থেকেছে। আর কোনো ভাবেই থাকা যাচ্ছে না বলে বাধ্য হয়ে বিছানাপত্র নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। আর বউকে কোথায় যেন বসিয়ে রেখে এসেছে। বার বার মাকে শোনাচ্ছিল- ইচ্ছে করছে বউকে ধরে পিটায়, কিন্তু এই দেশ বলে সেটা করতে পারছে না!
মা সরাসরি কথা দিতে পারেনি। ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছে। বাসায় এসে কল দিয়ে ভরসা দিয়েছে যে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তারপর ছোটো ভাইকে আগে বলেছে। সে আবার একটু বেশী দয়ালু। তার কথা হলো আপাতত আমাদের বাসায় উঠুক। মা সাহস না পেয়ে তখন আমাকে কল দিয়ে এই কাহিনী শোনালো।
ছোটো ভাই এর আগে এরকম দুজনকে বাসায় উঠিয়েছিল। পরে আর যাওয়ার নাম করছে না। তাই আবার একেবারে বাসায় উঠানোর কথা বাদ দিলাম। পরে মনে পড়ল পরিচিত একজনের বউ এসে পড়বে বলে আলাদা নতুন বাসা নিয়েছে। সেখানে আলাদা রুম আছে। আপাতত সেখানে উঠতে পারে। মাকে বললাম তাকে কল দিয়ে বলতে। সে রাজী হল। কিন্তু এইবার আর সেই ছেলে ফোন ধরছে না!
ফোন ধরাতে এবার আমাদের টেনশনের পালা। ছোটো ভাই বলছে ঐ যায়গায় (গাড়িতে ৮-১০ মিনিট লাগে) গিয়ে দেখে আসবে নাকি। হেন-তেন, নানা প্লান করা হচ্ছে যে এখন কি করা যায়। আমি শুধু বললাম ফোনে আবার চেষ্টা করতে।
বিকেলে বাসায় গিয়ে শুনি ছেলেটার সাথে আবার কথা হয়েছে। আমরা যে জায়গার কথা বলছি সেটা তার কাজের থেকে অনেক দূরে হয়ে যাবে। তাই কাছাকাছি একটা জায়গায় খোঁজ পেয়েছে- সেখানে দেখছে। ভাবলাম, যাক বাঁচা গেল!
সর্বশেষ খবর নেয়ার জন্য মা রাতে আবার কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। কিন্তু আর যোগাযোগ হয়নি বলে এখনো মনে একটু কাঁটার মত বিঁধে রইল।
———————-
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১০