সে কিছুদিন আগে দেশ থেকে এসেছে। আমাদের বাসায় এসে ওঠার কথা। কিন্তু আমরা তাড়াতাড়ি দেশে যাবো, তখন কিভাবে থাকবে – এসব ভেবে অন্য এক পরিচিতের বাসায় উঠল। সপ্তাহখানেক পর আমাদের সাথে দেখা করতে এল। সারাদিনে কিভাবে যেন মা’র খুব প্রিয় হয়ে গেল। সন্ধ্যায় চলে যাওয়ার সময় মা বলল থেকে যাও দুদিন। আমার মনটাও যেন কেমন করে উঠল। দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছে। চলে যাবে ভাবতেই মনটা আর বাঁধা মানল না। সারাদিন যদিও তেমন কোনো কথা হয়নি; চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ভালো লাগলে থেকে যাও।
একদিন দুইদিন করে এক সপ্তাহ থেকে গেল। বিকেলে কাজ থেকে এসে দু-চারদিন এদিক-সেদিক একটু ঘুরে বেড়িয়েছি। দেখা গেল দুজনেই দুজনের সঙ্গ বেশ পছন্দ করি। কথাবার্তা রুচি চিন্তাভাবনা সহ অনেক মিল দুজনের। দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম ব্যাপারটা দেখে। আমার মনে হলো সম্পর্কের কোথায় যেন কিছু নাটকীয়টা বা জটিলতার সৃষ্টি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দুজন দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। শেষে আমিই প্রথম লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেই।
গত উইকএণ্ডে দিয়ে এসেছি। আগেরদিন আমার সেল নাম্বারটা চেয়ে নিল। অনেক রাতে একটা এসএমএস এলো, “অনেক রাত হলো, ঘুমাবেন না?” জানিনা কিভাবে বুঝলো যে আমি জেগে আছি। আমিও উত্তরে দিলাম আমার জীবনের প্রথম এসএমএস! (এর আগে এসএমএস পেলেও উত্তর দেয়ার দরকার হয় নি, ফোন করেছি বলে।)
ওকে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসতেই মা আর ছোটো ভাই ধরল। আমি নাকি বেশি বেশি করছি। তার সাথে এত ঘোরাঘুরির কি আছে? যাওয়ার সময় ট্রেনে উঠিয়ে দিলেই তো হত। নামিয়ে দিয়ে আসার কি দরকার ছিল…হেন তেন… অনেক কষ্টে মাথাটা ঠাণ্ডা রেখে “তার সাথে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই, এত ভাবছ কেন?” উত্তর দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
এই সপ্তাহে ব্লগে এল জিয়া রায়হানের “সম্পর্ক” কবিতাটি। “সবার সাথে সবার সম্পর্ক” পড়েই মনে হলো – নাহ্ কথাটা ঠিক না। সিলিং-এর দিকে তাকাতেই দীর্ঘশ্বাস সহ মনের অজান্তে মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল “তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই!” সাথে সাথেই কমেন্টটি লিখে দিলাম। জুয়েল১২ প্রশ্ন করলেন “তিনি কে?” বললাম “কবি বলে গেছেন “সম্পর্ক নেই কথাটা ভুল”…তারপরও আমরা “তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই” কথাটি মাঝে মাঝেই বলি।”
একটু পরের কমেন্টে আরো কিছু লাইন যোগ করে দিলাম। এসএমএস করে ওকেও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করে নি।
কমেন্ট এডিট করার অপশন নাই। তাই সেটা একটু ঘষা-মাজা করে একটা পোস্ট হিসাবেই দিলাম। গুছিয়ে কিছু লেখা আমাকে দিয়ে হয় না। তাই ব্লগের কবি-সাহিত্যিকরা যদি দয়াকরে একটু দেখিয়ে দেন, তাতে যদি কিছু হয়-
অন্ধকার আকাশে হঠাত
চন্দ্রের উদয় হলো
অপলক তাকিয়ে থাকতে পারি তার মুখের দিকে
যেমনটি পারে সে-ও
একদিন রাতে এসএমএস পাই –
অনেক রাত হলো, ঘুমাবে না?
ঘুমাবো কিন্তু তোমার মুখটা তো মনে করতে পারছি না।
কেন, আমার চোখ, নাক, ঠোঁট – সব কি ভুলে গেলে?
ভুলে যাই বলেই তো ইচ্ছে হয় আজীবন দেখি…
দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে যায়
সমস্ত অন্তরাত্মায় লাগে টান
মন কাঁদে, কাঁদে চোখ
মুখ বলে – তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই!
——————
০৭ আগস্ট ২০১০