• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

বাংলা ব্লগ । Bangla Blog

এভারগ্রীন বাংলা ব্লগ

বকুল ফুলের মালা

December 3, 2010 by শ্রাবণ আকাশ

১.
এই মাত্র শেষ পরীক্ষাটা হয়ে গেল। শেষ পরীক্ষা দুটোতে ধরা খাবো। মনের অবস্থা চরম খারাপ। বাইরে বের হয়েই নিজেকে সঁপে দিলাম মুষলধারে বৃষ্টির নিচে। বৃষ্টি দেখলেই গুণগুণ করি “ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না…” নাহ্‌ কোনো সুরের দাগই আর দরকার নেই। অভিমানের সব চিহ্ন আজ ধুয়ে মুছে যাক।

বাড়ি ফিরলাম বর্ষা আর বন্যা নিয়ে। বাড়ির চারধারের নিচু জমিগুলো ডুবে গেছে। এই ভালো, কোথাও যেতে হবে না; পরীক্ষা কেমন হলো, কেউ জিজ্ঞেস করবে না।

খাওয়া আর ঘুম বাদে বাকি সময়টা কাটছে বন্যার ঢেউ গুনে। বিষন্নতা কাহাকে বলে, উহা কত প্রকার ও কি কি, উদাহরণসহ সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। কেউ বেশী একটা ঘাটাচ্ছে না। এলোমেলো ভাবে ফিরে আসে পুরোনো দিনগুলো। পরীক্ষার মধ্যে ও একবার হোস্টেলে এসেছিল। জানি না কেন। আমাকেও একটা খবর পাঠিয়েছিল। এতোদিন ধরে জমানো বুকের সমস্ত অভিমান দলা পাকিয়ে গলা পর্যন্ত উঠে এসেছিল। যাই নি দেখা করতে। একসময় দেখলাম গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হলো একবার ফিরে তাকাল। জানতাম এটাই শেষ। স্মৃতির গুতাগুতি ভালো না লাগলে মাঝে মাঝে নৌকাটা নিয়ে চলে যাই বিলের মাঝখানটায়। ধানক্ষেতগুলোর মাঝে শাপলা ফুটছে প্রচুর। কাকচক্ষু জলের মধ্যে মাছের আনাগোনা স্পষ্ট। তবুও মনের অবস্থাটা পরিষ্কার হয় না।

পোলাপানগুলো মেতেছে পুঁটিমাছ ধরার নেশায়। বাড়ির উত্তর দিকটা ঢালু। পাটখড়িতে সুতা বেঁধে বড়ছি দিয়ে মাছ ধরছে। মাঝে মাঝে দু’একটা টেংরা কই বা শিং মাছ উঠে এলেই সবাই চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলছে। তখন ইচ্ছে হয় থাবড়াইয়া সবগুলোর কাইন্‌সা ফাটিয়ে দিয়ে আসি! মন খারাপ হলে হিংসেটাও বাড়ে দেখছি।

এভাবে আর কত। এক পা এক পা করে ওদের কাছে গেলাম। আমাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেল। একজন তার মোড়াটা ছেড়ে দিল। বসতেই হাতে একটা ছিপও ধরিয়ে দিল; আর একদলা ময়দা। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে আলো ছড়িয়ে পড়ল। সবাই খুব খুশী!

বন্যার জল কমে আসে। আকাশে সাদা মেঘের দল। নদীর পাড়ে কাশফুলের শুভ্রতা। মনের মেঘও ততদিনে সাদাটে হয়ে গেছে। মেঘ মাঝে মাঝে কালো বটে কিন্তু অভিমান আর নেই। কার জন্যই বা করবো!

শারদীয় উৎসবের আমেজ এসে গেছে। আর মাস খানেক বাকি। শেষ দুই বছর উৎসব শেষ না হওয়া পর্যন্ত হোস্টেল থেকে বাড়ী আসার ছুটি পাই নি। ঠিক করলাম এবার যখন বাড়িতে আছি তখন সব কিছুর সাথেই প্রথম থেকে থাকবো। গ্রামের ক্লাবের বারোয়ারী আয়োজন। সবাইকে ডেকে মিটিং করলাম। চাঁদা ধরা হলো। ক্লাবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা হলো। সাজানো-গোছানোতে বারো-চৌদ্দ বছরের পিচ্চি মেয়েগুলোর আগ্রহ বেশী। চার জনের একটা দল আছে। ডাকলে এরাই আগে চলে আসে। কাজ শেষ হলে বলি স্নান করে আবার আসতে। তখন এদের জন্য আয়োজন হয় ঝালমুড়ির।

এসব করতে গিয়েই এই জেনেরেশনের সাথে পরিচয় হয় নতুন করে। এদের সরলতা আর অকৃত্রিম হাসির বন্যায় প্লাবিত হয়ে আমি নিজেও যে কখন এদের সারিতে নেমে এসেছিলাম – বুঝতে পারি নাই। এদের মধ্যে একজনকে ডাকি রাধিকা বলে। অন্যেদের চেয়ে একটু লম্বা, শ্যামলা গায়ের রঙ, টানা টানা বড় মায়াবী চোখ। রবীন্দ্রনাথ কি এই চোখ দেখেই “কালো হরিণ চোখ” বলেছেন!

আমার কথাবার্তাগুলো এর সাথেই হয়। ও ওর সখিদের সেই মত নির্দেশ দেয়। আমাকে সাথে তুই তুই করে দাদা ডাকে। মাঝে মাঝে আদেশের সুরে কথা বলে যেন আমার উপর ওর একটা অধিকার আছে। আমি মনে মনে হাসি আর অবাক হয়ে ওর মুখের দিয়ে তাকিয়ে থাকি। ওর কথার মধ্যে এমন মাধুর্য্য আর আপন করে নেয়ার সুর আছে তাতে হৃদয়ের কোথায় যেন একটা টান লাগে।

সন্ধ্যার পর সেজেগুঁজে মন্দিরে আসে। কাঁচাহাতে শাড়ি পড়ে, ঠোঁটে আলতা, চোখে কাজল। নাচ-গান-আরতি হয়। যখন ওদের বয়সীরা আরতি করে, ও এসে আমার হাত ধরে টানে ওদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য। সবাই হাততালি দিয়ে সায় দেয়। আমিও নেমে পড়ি। সবাই প্রতিমা দেখে আর ওর দিকে তাকালেই বুঝতে পারি ও দেখে আমাকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বলে চোখদুটো সবসময় ছলছল করে।

উৎসবের মধ্যে দিয়ে একসময় শেষ হয় উৎসব। তারপরও প্রতিদিন একবার করে ক্লাবে যাই। সবাই আসে। আড্ডা হয়। পুকুরের ওপাড়ে তাকালেই চোখে পড়ে নারিকেল গাছগুলোর নিচে দুটি চোখ পলকহীন তাকিয়ে আছে। বুকের মধ্যে ছলাত্‌ করে ওঠে। মাঝে মাঝে হাত দিয়ে ডাক দেই। অনেক সময় পালিয়ে যায়। আবার অনেক সময় কাছে এসে ঘুরে যায়। খেপানোর জন্য জিজ্ঞেস করি, “এত সেজেছিস কার জন্য”। মুখ কালো করে দূরে সরে যায়। দু-চারদিন আর কাছে আসে না।

২.
দিন যায়। ক্লাবে আবার সরস্বতী পূজার আয়োজন চলে। পূজা শেষ হলে এক বিকেলে বাইরে বসে সবাই মিলে হিসাব মেলাচ্ছি। ও যে সখীদের নিয়ে ঘুর ঘুর করছে সেটা চোখ এড়ায় নি। ব্যস্ত থাকাতে অনেকক্ষণ খেয়াল করিনি। এক সখী কাছে এসে ডাকল।
“কি হইছে?”
“ডাকে!”
মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ভাব নিয়ে আবার ব্যস্ত হলাম হিসাব দেখতে।
কিছুক্ষণ পর আবার ডাকল।
“কি হইছে?”
“ডাকছে কানে যায় না?”
“বিজি আছি দেখিছ না?” সুরে একটু রাগ ছিল মনে হয়।

ও এবার কাছে এলো। আঁচলের তলা থেকে বার করলো একটা বকুল ফুলের মালা। বুঝলাম এতক্ষণে, পুকুর পাড়ের ঐ ছোট্ট গাছটাতে যে কয়েকটি ফুল অবশিষ্ট ছিল – সবগুলো মিলে এই মালা হয়েছে। মালাটা দেখে মনে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। কিন্তু পলকের মধ্যেই একটা ঝড় এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। মালাটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে আমার গায়ের উপর ছুঁড়ে দিয়ে সেই যে চলে গেল – আর দেখা দেয় নি!

৩.
কয়েক বছর আগে যখন শেষ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম, বাড়ির ঐ কোনাটায় এসে দাঁড়িয়েছিল। একবার চোখাচোখি হতেই মুখটা নামিয়ে নিয়েছিল। সবাই তাড়া দিচ্ছিল গাড়ি ছেড়ে যাবে। আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম, হাত দিয়ে ইশারা করেছিলাম কাছে আসার জন্য। আসে নি।

এলাকার অনেকেই এসেছিল বিদায় জানাতে। এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি আর এক পা এক পা করে দূরত্ব বাড়ছে। বুঝতে পারছিলাম শুধু এক জনের চোখেই জল এসেছে। কিন্তু সেটা দেখার সৌভাগ্য আমার হলো না, আর কোনোদিন হবেও না!

৪.
বাইরে এসে যখনই সময় পেয়েছি ফোন করে খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। পাইনি। একদিন শুনলাম বিয়ে হয়ে গেছে।

৫.
অনেকটা বছর কেটে গেল। এক বিকেলে বাসায় এসে শুনি টিভিতে একটা গান বাজছে –
“তুমি কার লাগিয়া গাঁথো সখী বকুল ফুলের মালা
নিশি রাইতে কুঞ্জবনে আসবে কি শ্যামকালা…”

বুকের ভিরতটা হু হু করে উঠলো!

——————-
২৭ জুলাই ২০১০

Category: ব্লগ

About শ্রাবণ আকাশ

Previous Post:বাংলা টুলবার ব্যবহার করুন এবং ব্রাউজারেই শুনুন বাংলা FM রেডিও
Next Post:তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই

লাইব্রেরি · ডিকশনারি · কৌতুক · লিরিক্স · রেসিপি · হেলথ টিপস · PDF Download

EvergreenBangla.com